বাঘায় নতুন উদ্ভাবন পলিনেট হাউজে চাষ হচ্ছে ক্যাপসিকাম

নুরুজ্জামান,বাঘা :

আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নে তৈরী করা হয়েছে পলিনেট হাউজ । জমিতে লোহার পাইপের খুঁটির উপরে ও চারিদিকে ২০০ মাইক্রনের পলিথিন দিয়ে তৈরি করা অংশকেই বলা হয় পলিনেট হাউজ। কৃষি ক্ষেত্রে এটি নতুন উদ্ভাবন। এই উদ্ভাবন ইতোমধ্যে উন্নত দেশের কৃষিতে এনে দিয়েছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শীতের সবজি গরমে পাওয়া-সহ ফুল চাষের স্বপ্ন পুরনে পলিনেট হাউজ এর কোন বিকল্প নেই। তবে এই মুহুর্তে বাঘার পলিনেট হাউজে চাষ হচ্ছে ক্যাপসিকাম(মিষ্টি মরিচ)। এটি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

 

 

রাজশাহী কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে দেশের সব বিভাগে অন্তত একটি করে পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। তা দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন কৃষক। দেশের সবজি ভান্ডার খ্যাত রাজশাহী বিভাগের এমন ২১টি ‘পলিনেট হাউস’ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নে মোঃ আমিনুল ইসলাম রুমন নামে একজন উদ্যোক্তা লোহার পাইপ দিয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। তাকে সার্বিক ভাবে সহায়তা করছেন উপজেলা কৃষি অফিসার। সেখানে এই মুহুর্তে চাষ করা হচ্ছে ক্যাপসিকাম ।

পলিনেট হাউস – প্রতিনিধি

 

অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যাপসিকামে ভিটামিন এ এবং সি প্রচুর পরিমানে থাকে। এটি মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এতে ফাইবার, আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ উচ্চ পরিমাণে রয়েছে আর ক্যালরির পরিমাণ সামান্য। বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

 

এই মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত এ ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানিং এর চাষ দিন-দিন প্রসারিত হচ্ছে। এটি অভিজাত হোটেল ও ফাস্টফুড-সহ বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে টমেটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ।

 

এ বিষয়ে নার্সারির স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম রুমন জানান, এর আওতায় ১০০৮ বর্গফুটের একটি পলি শেড, সৌরচালিত ডাগ ওয়েল ও ড্রিপ ইরিগেশনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পলিনেট শেডে অসময়ে উৎপাদন করা হচ্ছে তরমুজ, টমেটো, রকমেলন, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, আগাম ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর ও হরেক রকম ফুল সহ শীতকালিন নানা প্রকার বিষমুক্ত সবজি।

 

তিনি বলেন ,ক্যাপসিয়াম বা মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মিষ্টি এ মরিচ খরা ও গোড়ায় পানি জমা কোনটিই সহ্য করতে পারে না। মিষ্টি মরিচের বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রতি শতকের জন্য ১ গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজ থেকে প্রথমে চরা তৈরি করে নিতে হয়। এ জন্য বীজগুলোকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে আগে থেকে তৈরি করে রাখা বীজতলায় ১০ সেমি. দূরে দূরে লাইন করে বীজ বুনতে হবে। বীজ বোনার ৭ থেকে ১০ দিন পর চারা ৩-৪ পাতা হলে মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। এ মরিচ কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কেজি দরে বিক্রী করা হবে বলে তিনি জানান।

 

 

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ইউরোপে ব্যবহৃত পদ্ধতি অনুযায়ী লোহার পাইপের খুঁটির উপরে ও চারদিকে ২০০ মাইক্রনের পলিথিন দিয়ে বানানো হয়েছে এই ‘পলিনেট-হাউস’। আর তাতে সারা বছরই সবজি এবং ফুলের চাষ হচ্ছে। অর্থাৎ ফুল ও সবজি চাষে শীত ও গরমের কোন বাধাই থাকছে না এখানে। ফলে অসময়ে চাষিরা যেমন লাভের মুখ দেখবেন , তেমনি ক্রেতারাও সারা বছরই টাটকা সবজি ও ফুল পাবেন।

 

 

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মোজদার হোসেন বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে পলিনেট-হাউস পদ্ধতিতে চারদিকে প্লাস্টিকের ছাউনি থাকায় সূর্যের তাপ সরাসরি খেতে ঢুকতে পারে না।এর ফলে শীতের সবজি গরমেও চাষ করতে অসুবিধা হয় না। এই পদ্ধতিতে পানির অপচয় ঠেকানো যায়। সার দেওয়া হয় নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে। প্লাস্টিকের চাদর থাকায় দুর্যোগের প্রকোপও অনেকটা ঠেকানো সম্ভব হয়। সব মিলিয়ে পলিনেট-হাউস পদ্ধতিতে ফসলের অন্তত ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয় ।

সানশাইন / শামি

 

 


প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২২ | সময়: ৬:০৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine