নওগাঁয় ড্রাগন ও সবুজ মাল্টা চাষ

নওগাঁ প্রতিনিধি: বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ স্থানীয়দের কাছে ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। গত এক যুগ ধরে এই উপজেলার মানুষ ধান ও সবজি চাষের পাশাপাশি জড়িয়েছেন আম চাষে। তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম মোঃ রায়হান। চাষ করেছেন ড্রাগন ও মাল্টার। এখানেই শেষ নয়, ড্রাগন ও সবুজ মাল্টা চাষে রায়হানের সফলতা এখন পথ দেখাচ্ছে অন্যদের। তাঁর দেখাদেখি অনেকে শুরু করেছেন ড্রাগন ও মাল্টা চাষের।
রায়হানের বাড়ি নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তিলনা ইউনিয়নের দোয়াশ গ্রামে। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনিই বড়। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার সময় শখের বশে বাড়ির পাশে নিজেদের চার বিঘা জমিতে আম বাগান গড়ে তোলেন। দুই বছর পর আম বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা আয় করেন তিনি। এভাবে প্রতি বছর নিজের বাগান থেকে আয় করা টাকা খরচ না করে টাকা জমাতে থাকেন। পাশাপাশি তিনি চালিয়ে যান পড়ালেখা। লেখাপড়া শেষ করে গ্রামে এসে নিজেদের ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে আরও আম বাগান গড়ে তোলেন। ২০১৯ সালে পোরশা উপজেলা বন্ধুপাড়া এলাকায় ৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে গড়ে তোলেন আম, পেয়ার, ড্রাগন ও মাল্টার বাগান। ১৩ বিঘা জুড়ে ড্রাগন ও মাল্টা মিশ্রভাবে চাষ করছেন বাকি অংশ ৩৭ বিঘা জমি জুড়ে আম ও থাই পেয়ারার মিশ্র বাগান রয়েছে। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে মাল্টা ও আর ১৫ মাসের মধ্যেই পাওয়া যায় ড্রাগনের ফল ধরতে শুরু করে।
প্রথম দফায় বিক্রি চার লাখ টাকা। এখন ড্রাগন ও মাল্টার বাগান থেকে বছরে বিক্রি প্রায় ১৫ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে ড্রাগন ও মাল্টা বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে তাঁর প্রায় ৭ লাখ টাকা আয় থাকবে। বাগানে সারিবদ্ধভাবে ড্রাগন ও মাল্টার গাছ লাগানো হয়েছে। তিন বছর বয়সী সাত থেকে আট ফুট উচ্চতার মাল্টা গাছগুলোতে থোকায় থোকায় মাল্টা ধরে আছে। মাল্টার গাছগুলো সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে। রায়হানের বাগানের উৎপাদিত ড্রাগন নওগাঁর স্থানীয় বাজার ছাড়াও বগুড়া, রাজশাহী ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ টাকার ড্রাগন এবং গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার মাল্টা বক্রি করেছেন তিনি। এখন প্রতি সপ্তাহে সাড়ে ৩ থেকে ৪ মণ ড্রাগন ও ২০ থেকে ২২ মণ মাল্টা নামছে তাঁর বাগান থেকে।
রায়হান বলেন, “আমার মনে হয়েছে, আম, পেয়ারা, বরই এসব ফল চাষের চেয়ে মাল্টা ও ড্রাগন ফল চাষ সবচেয়ে বেশি লাভজনক। বিশেষ করে ড্রাগন ফল চাষে অর্থনৈতিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ড্রাগন বেশি বেশি চাষ করে পুষ্টিগুন চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষকেরাও লাভবান হবেন”।
তিনি ড্রাগন ও মাল্টা চাষ শুরু করার পর এখন এলাকার অনেকেই তাঁর কাছ থেকে ড্রাগন ও মাল্টা চাষ পদ্ধতি শিখছেন। অনেকে ইতোমধ্যে চাষ শুরু করে দিয়েছেন। পোরশার বন্ধুপাড়া এলাকায় ৫০ বিঘার এই মিশ্র ফল বাগান ছাড়াও সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২০০ বিঘা জমি জুড়ে আমের বাগান রয়েছে। এসব বাগানে তাঁর প্রায় তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ।
তিনি আরো বলেন, ‘যখন থেকে একটু বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই লেখাপড়া করে চাকরির চেয়ে আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে কিছু একটা করে স্বাবলম্বী হতে চাইতাম। পরীক্ষার রেজাল্ট অনুসারে আমি ততটা মেধাবী না। চাকরি করে হয়তো জীবনে ততটা সফলও হতে পারতাম না। এখনকার অবস্থা চিন্তা করে আমি ভাবি, চাকরি না করে কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে আমি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে আম, পেয়ারা, ড্রাগন ও মাল্টা চাষ করে বছরে আমি এখন প্রায় অর্ধকোটি টাকা আয় করছি। পাশাপাশি আমার বাগানে নিয়মিত ২০ থেকে ২৫জন মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। চাকরি করে এত টাকা আয় করা ও এত মানুষের কর্মসংস্থান করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না’।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার সরকার বলেন, শুধু আম চাষ করলে বছরে দুই থেকে তিন মাস উৎপাদন পেতেন। সেখানে আমের পাশাপাশি পেয়ারা, মাল্টা ও ড্রাগন চাষ করে রায়হান ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বেশি। আমের পাশাপাশি মাল্টা ও ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ | সময়: ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ