বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
চারঘাট প্রতিবেদক:
তাকে দেখলেই আনন্দে মন ভরে যায় খুদে শিক্ষার্থীদের। কোনো কোনো শিক্ষার্থী দৌড়ে তার কাছে ছুটে আসে। পরম মমতায় এসব খুদে শিক্ষার্থীকে কাছে টেনে নেন, কখনও আদর করে দেন তিনি। সেই সঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর হাতে উপহার হিসাবে তুলে দেন বই। এতে আনন্দে আত্মহারা খুদে শিক্ষার্থীরা।
এসব খুদে শিক্ষার্থীদের কাছে একজন প্রিয় মানুষ ‘সোহরাব স্যার’। স্যার ডাকলেও তার কাছ থেকে বাবার মত মতো আদর-সোহাগ পায় খুদে শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে পায় নানা উপহার। শিক্ষার্থীদের প্রিয় সোহরাব স্যার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাকালীন সময়ের পরে শিশুদের শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে এবং শিক্ষার আলো সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে ব্যতিক্রমী কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সোহরাব হোসেন। শিশুদের বিদ্যালয়মুখী ও পড়াশোনায় মনোযোগী করতে নানা ধরনের বইসহ নানা উপহার দেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছেন বই, স্কুলব্যাগ, খাতা-কলম, রঙ পেন্সিল, ডায়েরি।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার সকালে চারঘাট পৌরসভাধীন সরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান তিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার হিসাবে নিয়ে যান সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল বই। ক্লাসে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইউএনওর কাছ থেকে বই উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা খুদে শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে প্রিয় সোহরাব স্যারকে ধন্যবাদ দেয়ার পাশাপাশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে বলেও জানিয়েছে তারা।
সরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন বলেন, সোহরাব স্যার আজ ( বৃহস্পতিবার) আমাদের গণিত ক্লাস নিয়েছে। স্যারের ক্লাসে অনেক মজা পেয়েছি। ক্লাসের সময় যারা প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে, স্যার তাদের বই উপহার দিয়েছে। আমরা আশায় আছি, স্যার আবারো আমাদের স্কুলে আসবেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজি ও গণিতে দুর্বল। বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর নিজেই বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ইংরেজি ও গণিত ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেবার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। নিয়মিত মনিটরিং এবং পরিদর্শনের ফলে শিক্ষকদের মাঝেও এক প্রকার জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
চারঘাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা সুলতানা বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করতে ইউএনও সোহরাব হোসেন স্যার যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী করতে তাঁর মতো সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে উপজেলায় যেসব অবহেলিত বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোর শিক্ষার্থীরাও ভালো ফল করবে। সেই সঙ্গে এই উপজেলায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।
এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, চারঘাটে আসার পর থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের পরিকল্পনা ছিল আমার। আমি চাই করোনার ধকল কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হোক। শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাক। কারণ পড়াশোনার বিকল্প নেই। সরকারি নির্দেশনার আলোকে কয়েকটা বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখতে পাই এখানকার শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও গণিতকে ভয় পায়। এজন্য শিক্ষকদের সচেতন করার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী সময় সুযোগ পেলে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে নিজেও ক্লাস নিচ্ছি।
ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, আমার প্রথম কাজ চারঘাটের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করা। কারণ বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষার হার বাড়ানো সম্ভব না। এছাড়াও সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় মাদকের প্রভাব রয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য নানাবিধ চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপজেলায় শিক্ষার উন্নয়নে আমার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সানশাইন / শাহ্জাদা মিলন