“তবু অতৃপ্ত যুব বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটারের কোচ”

আব্দুল্লাহ আল মারুফ:

এইতো ক’দিন আগের কথা! রাজশাহীর ক্রিকেট যখন একের পর এক ব্যর্থতার গল্প উপহার দিয়ে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনই যেন ক্রিকেটকে নিয়ে এই শহরকে এক আলো-আশার গল্প শুনিয়েছিলেন ক্লেমন রাজশাহী ক্রিকেট একাডেমীর কোচ আরিফিন চৌধুরী তুষার!

 

তাঁর নেতৃত্বেই দুর্বার গতি পেয়েছিলো রাজশাহীর যুবারা! তাঁর অধীনেই রাজশাহীর বয়স ভিত্তিক দলগুলো (অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৮) জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। মূলত তাঁর নেতৃত্বেই উত্তরাঞ্চল সহ সারা দেশব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রাজশাহীর যুবারা।

 

২০১৯ মৌসুমে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য একটি প্রীতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে স্থানীয় ১৫টি দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমী। সে দলটিরও নেতৃত্বে ছিলেন প্রায় একযুগ ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ক্রিকেট কোচ হিসাবে কর্মরত, আরিফিন চৌধুরী তুষার।

 

কথা হয় অভিজ্ঞ এই কোচের সাথে। ক্রিকেট কোচ হিসেবে তাঁর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “নিজ সুনামের জন্য নয় বরং রাজশাহী’র ক্রিকেটকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য ও রাজশাহী থেকে বেশী বেশী জাতীয় ক্রিকেটার সৃষ্টির জন্য কাজ করে যেতে চান তিনি, সকলের অলক্ষ্যেই, নীরবে, নিভৃতে!”

 

রাজশাহীর ক্রিকেটের অতীত ও বর্তমান চিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে কোচ তুষার জানান, “এখানে আগে নিয়মিত স্থানীয় লীগের পাশাপাশি ব্যক্তি এবং ক্লাবের উদ্যোগে অনেক বড় বড় টূর্নামেন্টের আয়োজন করা হতো। ক্রিকেটাররা নিয়মিত খেলার সুযোগ পেত। সে সময়টাকে রাজশাহীর ক্রিকেটের সোনালী অধ্যায় বললে বিন্দু মাত্র ভুল বলা হবেনা।”

 

“কিন্তু মাঝখানে এখানে ক্রিকেটটা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিলো। নিয়মিত প্রিমিয়ার এবং প্রথম বিভাগ লীগ হতোনা। দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগের পাশাপাশি স্থানীয় বড় বড় টুর্নামেন্ট গুলোতো একেবারে বন্ধই হয়ে গিয়েছিলো। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ে স্থানীয় ক্রিকেটে। আর্থিক নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা ভেবে ক্রিকেট থেকে নিরবে বিদায় নেন স্থানীয় বহু মেধাবী ক্রিকেটার।”

 

“তবে বর্তমানে প্রিমিয়ার ও দ্বিতীয় বিভাগ লীগটি আবার মাঠে গড়িয়েছে। আমাদের পরিচালক স্যারের (খালেদ মাসুদ পাইলট, সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার) ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্কুল ক্রিকেটের পাশাপাশি পেশাদার ক্রিকেটারদের জন্য ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের দু’টি পৃথক টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। এছাড়া, রাজশাহী বিভাগীয় দলের ক্রিকেটারদের উদ্যোগে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টও চালু হয়েছে, যেখানে জাতীয় দলের বড় বড় সব ক্রিকেটারদের পাশাপাশি বিদেশী বেশ কিছু ক্রিকেটারদের সাথে খেলেছে স্থানীয় সব ক্রিকেটাররা।”

 

ক্রিকেট কোচিংয়ে নিজের নানা সফলতার গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে কোচ তুষার বলেন, “কেবল আমার শুরু, অনেক পথ চলার বাকি। যত পথ চলবো ততই সফলতা আসবে। আর কতটা সফল হলাম, তার বিচার করবে আমার শিক্ষার্থীরা! কারন তারাই জানবে, আমি তাদের কতটুকু উপকার করতে পেরেছি।”

 

“এই সাব্বির হোসেন কিংবা মেহেরব হোসেন অহিন এর কথাই ধরুন, আমি তো ঢোল পিটিয়ে বলতে পারবোনা, ওরা আমার ছাত্র, কিংবা ক্রিকেটটা আমিই ওদেরকে শিখিয়েছি! যারা আমার শিক্ষার্থী, তারাই কেবল জানে সব। তারাই মূল্যায়ন করুক আমার সফলতা-ব্যর্থতার।”

 

আমরা জানি, সাব্বির এবং অহিন আপনারই সৃষ্টি এবং দু’জনই আজ বেশ ভাল পর্যায়ে ক্রিকেট খেলছে। তবুও বলবেন, আপনার কোন সফলতা নেই? জবাবে তুষার বলেন, “নাহ নেই। আজ যদি সাব্বির বা অহিন বা আমার আর কোন শিক্ষার্থী জাতীয় দলে খেলতো, তবে বলতে পারতাম, আমি কিঞ্চিত সফল। মাঝে মাঝে মনে হয়, এসবই আমার ব্যর্থতা, আমি ওদের হয়তো সেভাবে শিক্ষা দিতে পারিনি বা আমার শিক্ষা পদ্ধতিতে অনেক অনেক ভুল ছিলো, আর তাই হয়তো ওরা জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেনা, খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে পারছেনা!”

 

আপনি ওদের যতদূর পৌছে দেওয়ার, ঠিক ততদূর পৌছে দিয়েছেন, অহিন যুব বিশ্বকাপ জয় করেছে, এটাকেও কি সফলতা বলতে চাননা? এমন প্রশ্নের জবাবে কোচ তুষার যোগ করেন, “মোটেও নাহ! কারন সফলতার গল্প মানেই তৃপ্ত হওয়া। কখোনই আমি তৃপ্ত হতে চাইনা। তৃপ্তি মানেই সব চাওয়া পাওয়ার সমাপ্তি। আমি কাজ করতে চাই, আরও অনেক অনেক বেশি কাজ করতে চাই। আমার শিক্ষার্থীদের আরো বহু কিছু দিয়ে যেতে চাই, যা হয়তো দিতে পারিনি আমার সাব্বির আর অহিনকে।”

 

সানশাইন / শাহ্জাদা মিলন


প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২ | সময়: ১:৩৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine