বাঘা বাসটার্মিনাল মাদক জোন, চলে চাঁদাবাজিও

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা থেকে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বাস টার্মিনাল। সেখানে রয়েছে উন্নত সেনিটেশন ব্যবস্থা সহ যাত্রীদের বসার ঘর। উদ্দেশ্য ঢাকা এবং রাজশাহীগ্রামী বাসগুলো এই টার্মিনাল থেকে ছাড়া হবে।
এদিক থেকে রাজশাহীর বাসগুলো এখান থেকে ছাড়া হলেও টার্মিনালের ভবন তারা ব্যবহার করছে না। আর ঢাকা গামী বাস ছাড়ছে উপজেলা পুরাতন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান রাস্তার ধারে অবস্থিত ভাড়াকরা ঘর এর সামনে থেকে। ফলে প্রায়সই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে বাসটার্মিনাল ভবনে বসছে গাঁজা সেবনের আড্ডা।
সরেজমিন লক্ষ করা গেছে, ঢাকা গামী বড়-বড় বাস গুলো বাঘা পুরাতন বাসটার্মিনালের রাস্তা দখল করে সেখান থেকে যাত্রী তুলছে। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে পাশেই অবস্থিত রহমতুল্লা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পথচারীরা। একই অবস্থা সিএনজি এবং অটো চালকদের। তারা উপজেলা মুজিব চত্বর থেকে আলাইপুর, কিশোরপুর, লালপুর ও ঈশ্বরদী এবং বাঘা বাজার থেকে চানপুর ব্যাংগাড়ী, মশিদপুর, এছাড়াও বাঘা পৌর মোড় ও থানা গেট থেকে তেঁথুলিয়া আড়ানী যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাস্তা ও মোড় দখল করে বসেছে। আর এসব যানবহন থেকে পরিবহন গ্রুপ ও মোটর শ্রমিকদের নামে উত্তোলন করা হচ্ছে ভাউচারের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ। ফলে নিজেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরোধ।
বাঘা পুরাতন বাস টার্মিনালে গিয়ে লক্ষা করা গেছে, চার রাস্তার মাথায় বঙ্গবন্ধু চত্বর। এই চত্বরের চারদিকে রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার ব্যস্ততম এলাকা গুলোর মধ্যে এটি একটি। অথচ এই চত্বর ও রাস্তা দখল করে এখান থেকে বানেশ্বর ও ঈশ্বরদী গ্রামী সিএনপি ও অটোগুলো চলাচল করছে। এজন্য শ্রমিক সমিতির নামে এসব যান চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। এ দিক থেকে বাইরে যান বহন প্রবেশ করলে তাদের কাছে নেয়া হছে ৫০ টাকা। এর পাশেই রাস্তা দখল করে দাড়িয়ে আছে ঢাকা গ্রামী সাতটি পরিবহন। প্রতিদিন ভোর ৪ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত এখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে এরা যাওয়া-আসা মিলে কমপক্ষে ২০ বার চলাচল করছে।
বাস শ্রমিক সমিতির একাধিক কর্মী জানিয়েছেন, এখানে রাস্থা দখল করে বাস চলাচল করলেও ঢাকা গ্রামী প্রতি বাস থেকে পৌর টার্মিনালের নামে আদায় করা হচ্ছে ৭০ টাকা, একই ভাবে রাজশাহী গ্রামী বাস থেকে ৭০ টাকা এ ছাড়াও শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ৬০ টাকা এবং স্থানীয় বাস মালিদের জন্য ৫০ টাকা। এর বাইরেও যাত্রীরা সামান্ন কিছু মালামাল নিয়ে বাসে উঠতে গেলে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা। ফলে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে কতিপয় যাত্রী।
এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতি ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ক্যাশিয়ার হাফিজুল ইসলামের সাথে কথা বলরে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলে। আমি কাগজে কলমে ক্যাশিয়ার থাকলেও অজস্র অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আমার পদ থেকে নিজেকে অব্যাহতি দিয়েছি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পৌরসভা থেকে বাসটার্মিনাল ইজারে নিয়েছেন একজন প্রভাবশালী নেতা। কাগজে-কলমে বাস প্রতি ৫০ টাকা তোলার নির্দেশ থাকলেও সেটি না মেনে আদায় করা হচ্ছে ৭০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে বাস টার্মিনাল এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী যানান, পৌর সভা থেকে কোটি টাকা ব্যয়ে বাসটার্মিনাল ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হলেও এটি ব্যবহার না করার কারণে টার্মিনালটি অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে। তারা আরো জানান, বাঘা টেলিফোন একসেন্সের সামনে প্রাচীর না থাকায় ঐ জায়গাটি দখল করেছে মাইক্রো এবং প্রাইভেট ব্যবসায়ীরা। ফলে এ রাস্তর সামনেও প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে।
এ বিষয়ে বাঘা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত পান্ডে বলেন, আমাদের নামে যে চাঁদা উঠে সেটি পরবর্তীতে আমরা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বন্টান করে নেই। তবে শ্রমিক ইউনিয়নের টাকা কিছুটা হরিলুট হয়। বাঁকি টাকা কোন শ্রমিক আসুস্থ, কিংবা মারা গেলে তাদের পরিবারকে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, টার্মিনালটি এর আগে আমরা মালিক পক্ষ ডেকে নিতাম। তখন কোন অনিয়ম হয়নি। বর্তমানে রাজনৈতিক পর্যায় চলে যাওয়ার কারনে অনেক অনিয়ম হচ্ছে।
সার্বিব বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, বিষয় গুলো নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে আমি কয়েকদিন আগে মুজিব চত্বরে যানজট দেখে সকল সিএনজিকে সরিয়ে দিয়েছে। তিনি বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৩ | সময়: ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ