রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে শিক্ষকদের ভোগান্তি বন্ধের নির্দেশ সচিবের

স্টাফ রিপোর্টার : কিছুদিন ভাল সেবা দেবার পর আবারো পূর্বের ন্যায় রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় শাখায় শিক্ষক হয়রানি আর ভোগান্তি শুরু হয়েছে। কখানো আবেদিত ফাইল খুঁজে না পাওয়া; আবার কখনো ফাইলের অনগ্রসরতা। এমনই সমস্যা বিষয়ক একাধিক অভিযোগ বোর্ড সচিব প্রফেসর হুমায়ন কবিরের কাছে গেলে রবিবার তিনি আকস্মিকভাবে বিদ্যালয় শাখা পরিদর্শনে যান। গিয়েই তিনি হতভম্ব হয়ে যান।
শিক্ষকদের ভিড়ে বিদ্যালয় শাখার ভেতরে তিল ফেলার ঠাই নেই। বাইরেও একই অবস্থা। তিনি সকলের সামনেই কর্মরতদের হুসিয়ারি করে বলেন, শিক্ষকদেরকে হয়রানি করা বন্ধ করুন। কোন ফাইল যদি চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়েও আটকে যায় তাহলে ঐ ফাইলের সারাংশ একটি চিরকুটে লিখে আগত শিক্ষককে আমার দপ্তরে পাঠান। আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে ফাইল অবমুক্ত করার চেষ্টা করবো।
বগুড়া জেলার টিএম মেমোরিয়াল একাডেমি নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোটি পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটির জন্য আবেদন করেছিলো গত ৩ মার্চ। কিন্তু ফাইলটি এখন কোন টেবিলে অবস্থান করছে সেটির নেই কোন হোদিস বলে জানান শিক্ষা বোর্ডে আসা প্রতিষ্ঠানটির একজন শিক্ষক।
একইরকম সমস্যায় জর্জরিত বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার রামকৃষ্টপুর চৌদিঘী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত আবেদিত ফাইলটির। গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে আবেদন করার পর ডিলিংস টেবিল থেকে সেটি অগ্রসর হলেও এখন কোথায় আছে ফাইলটি সেটিরও কোন হোদিস নেই বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষক। এরকম হোদিস না থাকা ফাইলের অভাব নেই বিদ্যালয় শাখায়। অন্যদিকে, আবেদিত ফাইলের দীর্ঘসময় ধরে স্থিতিবস্থার বিষয়গুলো নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষকদের। ঠিক এর বিপরীতমূখী সেবাও আছে এই শাখাতে। কোন ফাইল মাসের পর মাস আটকে থাকলেও ১৬ দিনের মাথায় আবেদিত ফাইলের কাজ সম্পন্ন হবার পাশাপাশি মাত্র ৬ দিনেও ফাইল অবমুক্ত হয়েছে লাল ফিতার দৌড়াৎ থেকে এমন রেকর্ডও আছে। তবে, অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে ফাইলের খাঁলাস হবার ঘটনা ঘটে যদি উক্ত ফাইলের পেছনে কোন বড় মানের ব্যক্তির আশির্বাদ থাকে তবেই। নতুবা লাল ফিতার আবর্তে ঘুড়তে থাকে মাসের পর মাস বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকদের।
এদিকে, শিক্ষকদের চরম ভোগান্তির পেছনে বর্তমান বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহা. জিয়াউল হকের দিকেই অভিযোগের তর্জনী সকলের। আবেদিত কিছু ফাইলের চুড়ান্ত চিঠি সম্পন্ন হয়ে থাকলেও বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহা. জিয়াউল হক উক্ত চিঠিগুলোতেও স্বাক্ষর করছে না বলেও অভিযোগ কর্মরতদের। বিদ্যালয় পরিদর্শক পূর্ববর্তী কর্মকর্তার চাইতে অনেক বেশি স্থূলগতি সম্পন্ন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষক ও সেখানে কর্মরতদের। সূত্র জানায়, পূর্বের বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবাশীষ রঞ্জন রায় একদিনে ১৪৫ টি আবেদিত ফাইল স্বাক্ষর করার মতো রেকর্ড আছে। এছাড়াও ঐ শাখার পূর্ববর্তী ও বর্তমান উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শকগণও বিদ্যালয় শাখার ফাইলের স্তুপহ্রাসে একদিনে প্রায় ১২০ টিরও অধিক আবেদিত ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু বর্তমান বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহা. জিয়াউল হক একদিনে সর্বোচ্চ ত্রিশটি ফাইল স্বাক্ষর করছেন। যার কারনে পূর্ববর্তী জমে থাকা ফাইলগুলোর সাথে প্রায় প্রতিনিয়ত জমা হওয়া আবেদিত ফাইলগুলোর সংখ্যা এখন প্রায় আকাশচুম্বি বলে মন্তব্য ভুক্তভোগীদের। গেল সপ্তাহ থেকে বেশ কয়েকদিন সরেজমিনে বিদ্যালয় শাখায় গিয়ে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। বিদ্যালয় শাখায় প্রবেশ করে লক্ষ্য করাগেছে, উক্ত শাখার প্রতিটি র‌্যাগ ও টেবিলই শুধু নয়; উক্ত শাখার সমস্ত ফ্লোরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার আবেদিত ফাইল। স্থান সংকুলান না হওয়াতে বিদ্যালয় শাখার প্রবেশদ্বার ঘিরেও রাখা হয়েছে প্রায় শখানেক ফাইল।
এছাড়াও স্তুপাকারে পাহাড়সম ফাইল বাসাবেধেছে বিদ্যালয় পরিদর্শকের কক্ষেও। বিদ্যালয় পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করে বিভিন্ন জেলার শিক্ষক ও সেখানে কর্মরতরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আগত শিক্ষকদের নিয়ে তিনি নিজ কক্ষে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যক্তিগত গল্পগুজোবেই সময় বেশি ক্ষেপন করেন। এছাড়াও মাঝেমধ্যেই তিনি নিজ কক্ষ ছেড়ে কোথাই চলে যান সেটা বলতে পারেন না কেউ। পূর্বের ন্যায় গতকালকেও সেটির সত্যতা পাওয়া গেছে। দুপুর একটার কিছু পূর্বে দেখাগেছে বিদ্যালয় পরিদর্শকের কক্ষের সামনে দাড়িয়ে আছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রায় বিশ পচিশজন শিক্ষক।
এবিষয়ে বোর্ড সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শক এখানে নতুন যোগদান করেছেন তাই কাজ বুঝে উঠতে হয়তো একটু সময় লাগবে। এছাড়াও তিনি ই-নথি সম্পর্কে বিজ্ঞ নন। উনাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিলে ই-নথি কাজে প্রশিক্ষিত করতে হবে। অভিজ্ঞ ও আন্তরিক কর্মকর্তা ব্যতিত এই শাখাতে ফাইলের স্তুপ কমানো অসম্ভব বলে দাবি সেখানে কর্মরতদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে কর্মরতদের কেউ কেউ বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শকের কক্ষে কোন ফাইল নিয়ে গেলে তিনি মাঝেমধ্যেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান। এমন আচরণে আমরা বিব্রত।
শিক্ষা বোর্ড সচিব আরো বলেন, বিদ্যালয় শাখার ফাইলের স্তুপ হ্রাসে আমি যোগদান করার পর থেকে ই-নথির প্রতি জোড় দিয়েছি। কিন্তু কর্মরতদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবে সেটা পরিপূর্ণভাবে অ্যাপ্লাই করা সম্ভব হচ্ছেনা। এবিষয়ে শাখার সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু দাদরা খাঁন বলেণ এখানে রয়েছে চরম জনবল সংকট।


প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২২ | সময়: ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ