সর্বশেষ সংবাদ :

সবার সহযোগিতা না পেলে ‘ইমেজ সংকট’ হতে পারে: নতুন সিইসি

ঢাকা অফিস: সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব দায় নির্বাচন কমিশনের নয় মন্তব্য করেছে সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সব দলের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করতে কাজ করবো। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে হাবিবুল আউয়ালকে নিয়োগ দেন। আর তার নেতৃত্বেই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালিত হবে। সংবিধানের বর্ণিত আইনের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রথম ইসি হচ্ছেন সাবেক সিনিয়র সচিব হাবিবুল আউয়াল। নিয়োগের প্রজ্ঞাপনের পর সাংবাদিকরা তার বাড়িতে যান। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, যদি রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা না পান তবে তাকে নিয়েও ‘ইমেজ সংকট’ হতে পারে। অতীতের দুটি নির্বাচন কমিশনের ইমেজ সংকট আছে, সেটা কাটাতে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইমেজ সংকট আমাকে নিয়েও হতে পারে। যদি আমি রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা না পাই, নির্বাচনি পরিবেশ অনুকূল না হলে আপনারা আমাকে দায়ী করবেন। আমাদের চেয়ে অনেক বড় হচ্ছে রাজনৈতিক দায়িত্ব। তারা যদি মনে করে নির্বাচন কমিশন সুন্দর নির্বাচন করিয়ে দেবে, তাহলে ভুল ধারণা হবে। তাদেরও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তারা আমার কাছে সহযোগিতা চায়, আমিও তাদের কাছে সহযোগিতা চাই। এটা যদি নিউজিল্যান্ড হয় তাহলে চা খেতে খেতে নির্বাচনে হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতে সেটা হবে না। এখনও পরিবেশ স্টেবল হয়ে ওঠেনি। হাবিবুল আউয়াল বলেন, জোরের সঙ্গে বলবো- সব দোষ নির্বাচন কমিশনকে দিলে আমি গ্রহণ করবো না। রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা আছে। পুলিশ, আনসার, র‌্য্যাবকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি ওদের কমান্ড করবো না। আমি এসপিকে বদলি করতে পারবো না। আমি কমান্ড করলে কেউ রাইফেল নিয়ে দৌড়াবে না। তিনি বলেন, আমার সবার প্রতি সমান দৃষ্টি থাকবে। সকলের সঙ্গে সমান আচরণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে কারচুপি চিরকালই হয়েছে কম-বেশি। এই জিনিসটা যাতে কম হয়, মানুষের যাতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে সেটা যদি ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সফলতা। কিন্তু অ্যাবসলিউট সেন্সে আমি এখনও বিশ্বাস করি না সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবেন বা আসতে পারবেন। অতীতে ১০০-২০০ বছরে নির্বাচনে সেটা দেখা যায়নি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে তাদের বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিএনপির বক্তব্য শুনে একটু হতাশ হচ্ছি, উনারা নির্বাচন করবেন না। কিন্তু আমি বলবো, নির্বাচনে আসেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আপনি যদি মাঠ ছেড়ে দেন, তাহলে নির্বাচন অবাধই হবে। কোনও বাধা থাকবে না। মাঠে যদি থাকেন, তাহলে নির্বাচন বাধা-বিপত্তির মধ্যে সকলের অংশগ্রহণটা হবে। অবাধ হলো, কেউ গেলো না আমি একাই ভোট দিয়ে আসলাম। সে অবাধ আমরা চাচ্ছি না। তিনি বলেন, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড আমাদের তৈরি করতে হবে। এটাও আমি বলবো অ্যাবসলিউট সেন্সে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে… এজন্য পক্ষ-প্রতিপক্ষ শক্তিকে কাছাকাছি শক্তির হতে হয়। যারা অপজিশনে থাকবেন তাদের আরও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাহলে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ আপেক্ষিকভাবে ভালো হবে। নির্বাচন কমিশন একা সব কাজ করতে পারবে না বলেও জানান হাবিবুল আউয়াল। বলেন, আমি সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে বসবো। আশা করি সবাই সহযোগিতা করবে। সবার বক্তব্য শুনে আন্তরিক মনে হয়েছে। সবাই সুন্দর নির্বাচন চাইছে। নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন করে না। অনেক স্টেকহোল্ডার থাকে। নির্বাচন কমিশন টপ লেবেল থেকে পলিসিগুলো বলে দেয়। সব সেন্টারে নির্বাচন কমিশন থাকে না। প্রশাসনকে কতটা নিরপেক্ষ করা যায় দায়িত্বশীল করা যায়, সেটাও কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ। আগের দুই কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সেই জায়গায় ইমেজ কতটুকু রাখতে পারবেন জানতে চাইলে বলেন, সেটা দিন শেষে বলতে পারবো। কতটা দায়িত্ব পালন করতে পারি তার ওপর নির্ভর করবে। অতীতে কোন কমিশন কী করেছে সেটা নিয়ে মন্তব্য করবো না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নতুন ইসির কাজ কী হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখনই বলতে পারবো না। তবে এটা সহজ কাজ নয়। আমার কাছে লাঠি নেই, বন্দুক নেই। রাশিয়া আর ইউক্রেনের মত যুদ্ধ করতে পারবো না। খালি হাতে যুদ্ধ করতে হবে। নির্বাচন নিয়েই মাথা ঘামাবো। রাজনৈতিক দিকে নয়। কেউ তত্বাবধায়ক সরকার চাইলে রাজনৈতিকভাবে যেতে যাবে। সেটা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। আস্থার পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের মুখ্য ভূমিকা আছে, সেখানে কী ভূমিকা কী থাকবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি মনে করি না সব আমার দায়িত্ব। এখানে অন্যদের ভূমিকাও আছে। গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। আমি যদি ভুল করি, সমালোচনা করবেন। ধরিয়ে দেবেন। চ্যালেঞ্জ বলে পিছিয়ে যাবো না। মোকাবিলা করতে হবে। সেটা করবো। আমি সবাইকে বলব, নির্বাচনে আসুন। মাঠ ছেড়ে যাবেন না। রাজনৈতিক দল মানেই নির্বাচন করবে। তাদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। যারা বলছেন নির্বাচন করবেন না তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে নির্বাচন করেন। না হলে ডেমোক্রেসি শক্তিশালী হবে না। দলগুলো সঙ্গে সংলাপে বসবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবো। কিভাবে কাজ করবো। আগে শপথ নিতে দিন। তারপর সব ঠিক করবো। আমাদের আসল কাজ নির্বাচন পরিচালনা।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২ | সময়: ১:৫৬ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ