মধুর খামারে বাবুলের মাসে আয় লাখ টাকা

সিংড়া প্রতিনিধি: মৌসুমী ব্যবসায়ি বাবুল পেশায় ছিলেন, পল্লী চিকিৎসক। এখন তিনি প্রতিমাসে আয় করেন এক লাখ টাকা। অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ এই ৩ মাস সরিষা থেকে সবচেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ হয়। সরিষার মৌসুম শেষে বাকি ৪ মাস তিনি ধনিয়া, কালোজিরা ও লিচু থেকে মধু সংগ্রহ করে।
সাত মাসে তিনি প্রায় একশত মণ মধূ সংগ্রহ করেন। তার সংগৃহীত মধু অনলাইনে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন পাইকারী বাজারে বিক্রি করে, তিনি প্রতিমাসে আয় করেন প্রায় এক লাখ টাকা। বাবুল ডাক্তার থেকে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন মৌচাষী বাবুল হিসেবে।
শুরুটা কিভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে মৌচাষী বাবুল বলেন, ২০১৪ সালে নাটোর কৃষি মেলায় গিয়ে মৌচাষ প্রশিক্ষণের ওপর নাটোর বিসিকের একটি নিয়োগ দেখি। এরপর যোগাযোগ করে সেখানে ১৫দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি মৌচাষ। পরে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ নেই। এখন আমি মৌচাষের পাশাপাশি বিসিকের একজন ট্রেইনার হিসেবেও কাজ করছি।
মাত্র ৭ বছরে বাবুল একজন সফল মানুষ ও মৌচাষী হয়ে উঠেছেন। তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। নাটোর শহরে কিনেছেন জায়গা এবং গ্রামের বাড়িতে কিনেছেন ধানী জমি ও করেছেন বাড়ী। সবমিলে স্বচ্ছল সংসার মৌচাষী বাবুলের। বাবুলের এমন সফলতার সুনাম দেখে তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই এগিয়ে আসছেন মৌচাষে। তিনি বলেন, সবাই ডাকতেন বাবুল ডাক্তার নামে।
৭ বছরের ব্যবধানে তার নাম হয়েছে মৌচাষী বাবুল। পদবীর এই পরিবর্তন এনে দিয়েছে মৌচাষ করে। মেধা, শ্রম আর সময়কে কাজে লাগিয়ে বাবুল এখন সফল মৌচাষী হিসেবে এলাকায় পরিচিত পেয়েছেন। এলাকায এখন আর কেউ বাবুল ডাক্তার নামে ডাকেন না। সবাই মধু বাবুল নামে ডাকে ও চেনে। সরিষার মৌসুমসহ বছরের ৭ মাসে প্রায় ১০০মণ মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষী বাবুল। এর মধ্যে সরিষা থেকে মধু সংগ্রহ হয় প্রায় ৪০মণ। এতে খরচ বাদে বছরে তাঁর আয় হয় ৭ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা।
এক সময় গ্রামে চিকিৎসা করে কোন রকম সংসার চালানো সেই বাবুল আজ স্বাবলম্বী একজন মানুষ। মৌচাষী এই বাবুলের বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশভাগ গ্রামে। সিংড়া উপজেলার ডাকমুন্ডপ বাজারে আছে তার মৌ খামার। খামারে আছে ৬০টি মৌবাক্স। খামারে কাজ করেন ৪ জন কর্মচারী।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সেলিম রেজা বলেন, সিংড়া উপজেলায় সরিষা ক্ষেতে ২৪৯টি মৌবাক্স স্থাপন করে মৌচাষীরা মধু সংগ্রহ করছেন মৌ চাষীরা। প্রথম বছর ১০জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মৌ চাষীকে আধুনিক মৌবাক্স দিয়েছি। সরিষার এই সময়ে মধু সংগ্রহ করে কৃষকরা বাড়তি আয় করছেন। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। আশা করছি আগামীতে এই এলাকায় সরিষা আবাদের পাশাপাশি মৌচাষীর সংখ্যা বাড়বে।