পুরুষের চেয়ে নারীরা ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত

সানশাইন ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত নমুনায় ১৭ শতাংশ ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪০ দশমিক পাঁচ শতাংশ আর নারী ৫৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
বুধবার প্যাথলজিভিত্তিক ক্যানসারে রেজিস্ট্রি ও মাসব্যাপী হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসারে রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণার ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ এই গবেষণা পরিচালনা করে।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ডা. শেহরিন ইমদাদ রায়না। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএমএমইউ সার্জারি বিভাগে বহির্বিভাগে হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ডায়াগনোসিসের জন্য দেওয়া সলিড টিউমার থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
গবেষণার জন্য মোট নমুনা সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ১৭৫টি আর তার মধ্যে ক্যানসার শনাক্ত হয় তিন হাজার ৫৮৯ জনের। শতকরা হিসেবে প্রায় ১৭ শতাংশ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নারী পুরুষ ভেদে এখানে রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৪০ দশমিক পাঁচ শতাংশ আর নারী ৫৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে—পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন মূত্রথলি (১০ দশমিক দুই শতাংশ), প্রস্টেট (৯ দশমিক ৯ শতাংশ) আর মুখগহ্বরের (আট দশমিক পাঁচ শতাংশ) ক্যানসারে। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার, জরায়ুমুখ ক্যানসার আর মুখগহ্বরের ক্যানসারে আক্রান্ত হার বেশি। শতকরা হিসেবে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন ২৩ দশমিক তিন শতাংশ, জরায়ুমুখে আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ দশমিক পাঁচ শতাংশ আর মুখগহ্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন আট দশমিক ৯ শতাংশ নারী।
অপরদিকে, প্রজননতন্ত্রের ক্যানসারের মধ্যে পুরুষের হার ১১ দশমিক দুই শতাংশ আর নারী ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। সেমিনারে হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার গবেষণায় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল, রেডিওলজি ও হিস্টোলজি বিভাগের মাধ্যমে যেসব ক্যানসার রোগীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে এসেছেন তাদের মধ্যে দেখা গেছে, মোট এক হাজার ৬৫৬ জনের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক রোগীর সংখ্যা এক হাজার ২৩৮ জন আর শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ৪১৮ জন। শতকরা হিসেবে পূর্ণবয়স্ক রয়েছেন ৭৪ দশমিক আট শতাংশ আর শিশু রয়েছে ২৫ দশমিক দুই শতাংশ।
আর পূর্ণ বয়স্ক রোগীদের মধ্যে পুরুষ এক শতাংশ আর নারী এক দশমিক দুই শতাংশ। সেখানে পুরুষরা যেসব ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বলে পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার (৯ দশমিক ছয় শতাংশ), লিউকোমিয়া (৯ দশমিক চার শতাংশ) আর লিম্ফোমা (৯ শতাংশ), নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার ২৮ দশমিক এক শতাংশ, থাইরয়েডের ক্যানসার ১৬ দশমিক এক শতাংশ আর জরায়ুমুখের ক্যানসার ১২ দশমিক দুই শতাংশ।
আর শিশুদের মধ্যে ছেলে শিশুরা বেশি ভুগছে। লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত ৭১ দশমিক পাঁচ শতাংশ আর লিম্ফোমায় আক্রান্ত ১০ দশমিক তিন শতাংশ ছেলে শিশু। মেয়ে শিশুদের মধ্যে লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত ৬৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ আর হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ১১ দশমিক ছয় শতাংশ।
পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং প্যাথলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরাসহ অন্যরা।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২২ | সময়: ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ