এমপি হতে উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের হিড়িক

সানশাইন ডেস্ক: জাতীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার আশায় পদ ছাড়ছেন দেশের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা। রোববার বিকেল পর্যন্ত মোট ৯ জন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও তার পদ ছেড়েছেন।
জানা গেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সরকারের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের পদ লাভজনক। এসব পদে থেকে সংসদ নির্বাচন করা যাবে না। এ জন্য পদ ছাড়ছেন চেয়ারম্যানরা। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল পর্যন্ত ৯ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, আর একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হয়েছে।
এখন পর্যন্ত পদ ছাড়লেন যারা: টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ইউনুস ইসলাম তালুকদার। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি টাঙ্গাইল-২ (ভুঞাপুর-গোপালপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।
জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের কাছে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাসুরা বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে এবং চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২০ আসনে প্রার্থী হতে ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন মোহাদ্দেস হোসেন। স্থানীয় সরকার সচিব বরাবর দেওয়া পদত্যাগপত্র গত ৩০অক্টোবর দুপুরে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে জমা দেন। মোহাদ্দেছ হোসেন বর্তমানে ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। গত ২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর এই পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ৩০ অক্টোবর তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। এসএম আল মামুন টানা দুইবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১৫ নভেম্বর স্থানীয় সরকার তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন জাহিদুল ইসলাম রোমান। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জাহিদুল ইসলাম রোমান চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল ইসলাম শফি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত ৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়মানুসারে পদত্যাগপত্র জমা দেন শফিকুল ইসলাম শফি। আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে অংশ নিতে ও গণমানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। যেহেতু একই সঙ্গে দুটি এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা যাবে না তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-২ আসনে (দিরাই ও শাল্লা) নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়তে পদত্যাগ করেছেন শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে আল আমিন চৌধুরী। ১৯ নভেম্বর বিকেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই। তিনি শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সুনামগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রায় দুই বছর ধরে মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবও পদ ছেড়েছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় সম্প্রতি পদত্যাগ করেন তিনি।
এম এ মোতালেব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। অন্যদিকে, সাভার উপজেলার আশুলিয়ার স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম তার পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। ৮ নভেম্বর তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের কাছে এ অব্যহতিপত্র জমা দেন। তিনি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জানা গেছে, তিনি ঢাকা-১৯ ( সাভার ও আশুলিয়া) আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
যা বলছেন চেয়ারম্যানরা: সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা এসএম আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশা করে মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। আল্লাহর রহমত আর নেত্রী যদি চায় আর কী! তিনি আরও বলেন, জেতার বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস আছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে অংশ নিতে ও গণমানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। যেহেতু একই সঙ্গে দুটি এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা যাবে না তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি নৌকার মনোনয়ন নিয়ে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মতোই প্রধানমন্ত্রীকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসন উপহার দেব।
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা এম এ মোতালেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র নিয়েছি। আমি আশা করছি দলীয় মনোনয়ন পাবো। তিনি আরও বলেন, আমি কাজ করেছি, মানুষের সেবা করেছি। এ কারণে আমি মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছি।
পদ ছাড়বেন আরও অনেকে: এমপি হওয়ার জন্য আরও অনেক চেয়ারম্যান পদ ছাড়বেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আরও অনেকে সংসদ নির্বাচন করার জন্য পদ ছাড়বেন। এজন্য তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ