বায়না করে কোটি টাকা হাতিয়েছেন রাসিকের সাবেক নারী কাউন্সিলর

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে এক নারীর বিরুদ্ধে জমি বায়নার নামে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ওই নারীর নাম মোছা: ফারজানা হক। তিনি নগরীর লক্ষীপুর এলাকার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী এবং রাজশাহী সিট করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের সাবেক কাউন্সিলর।
এদিকে দলিলের মাধ্যমে বায়না করে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে ওই নারী জানান, জমি রেজিস্ট্রির করে নিতে তাকে মারধর করে দলিলে সই নেয়া হয়েছে। অভিযোগকারীরা হলেন, মোল্লাপাড়া এলাকার সাজ্জাদ বাদশা সূর্য, বহরমপুর এলাকার শফিকুল, বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেক। বায়না দলিল সূত্র মতে, এই তিনজনের কাছ থেকে বায়নার মাধ্যমে ওই নারী ৯২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে অভিযুক্তদের দাবি, ওই নারী বাইনার মাধ্যমে আরও অনেক জনের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে রেখেছেন।
সূত্র মতে, অভিযুক্ত ফারজানা গত বছরের ২৩ জুন বায়না দলিলের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকায় ৬ মাসের প্রথম বায়না করেন মোল্লাপাড়া এলাকার সাজ্জাদ বাদশা সূর্যের সাথে। এর দুই মাসের মাথায় ১৭ আগস্ট পূর্বের বায়না বাতিল নাকরেই চুপিসারে ৩৭ লাখ টাকায় দ্বিতীয় বায়না কররেন বহরমপুর এলাকার শফিকুলের সাথে। এদিকে দ্বিতীয় বায়নার ৪ মাস না যেতেই ২৯ ডিসেম্বর তারিখে ওই নারী আবারো গোপনে ৪৫ লাখ টাকার নিয়ে তৃতীয় বায়না করেন বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেকের সাথে।
বিষয়টি সূর্য জানার পর ঝামেলায় না গিয়ে অভিযুক্ত ফারজানাকে টাকা ফেরত দিতে বলেন। গত ২৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে সূর্য ও ফারজানা পবা ভূমি সাবরেজিস্টারের অফিসে উপস্থিত হলে বিষয়টি তৃতীয় বায়নাকারী। তিনি সাবরেজিস্টারের অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে ফারজানাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। এর পর ফারজানার সামনে হাজির হয় দ্বিতীয় বায়নাকারী শফিকুল। এসময় পবা দলিল লেখকদের উঠানে এনিয়ে বিচার শালিশ শুরু হয়। আব্দুল খালেক বায়নার বাকি টাকা দিয়ে পুরো জমি রেজিস্ট্রি নিতে চান।
আব্দুল খালেক জানান, ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় ফারজানার প্রায় ১০ কাটা জমি নেয়ার জন্য বায়না দলিল করা হয়। বায়নার সময় তাকে ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। দলিল মতে বাকি টাকা ৬ মাসের মধ্যেই তাকে বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে জানতে পারি ফারজানা অন্যদের কাছেও বায়না করে টাকা নিয়েছেন। তিনি এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা নিয়ে রেখেছেন। এখন আমি বায়নার বাকি টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি নিতে চাইলে তিনি জমি দিতে রাজি না। এমনকি তিনি যার যার সাথে বায়না করেছেন তাদের কাউকেই জমি রেজিস্ট্রি দিতে চাচ্ছে না। এতে করে আমরা সবাই আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
শফিকুল হক জানান, তার সাথে ৩৭ লাখ টাকা বায়না করে প্রতারণার মাধ্যমে অন্যমানুষের কাছেও ফারজানা জমি বায়না দিয়ে টাকা নিয়েছেন। এই নারী প্রতারণার মাধ্যমে নানা মানুষের কাছ থেকে জমি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সূর্য বলেন, আমারা সাথে বায়না করে পরে আরও অনেকের সাথে বায়না করেছে দেখে ঝামেলা এড়াতে আমি টাকা ফেরত চাই। ২৬ জানুয়ারি পবা রেজিস্ট্রি অফিসে বায়না বাতিল করে টাকা ফেরত নিতে আসলে অন্যান্য বায়নাকারীরাও সেখানে এসে উপস্থিত হয়। সবার কাছ থেকে দলিল করে টাকা নিলেও ওই নারী এখন কাউকেই জমি দিতে চাচ্ছে না।
সোমবার রাতে অভিযুক্ত ফারজানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বায়না করেছি। এখন সবার টাকা ফিরিয়ে দিবো। তবে ২৬ জানুয়ারি রাতে পবা সাব রেজিস্টারের অবর্তমানে জমি রেজিস্ট্রি নিতে আমাকে মারধর করে দলিলে সই করে নেওয়া হয়েছে। এখন আমি শাহমখদুম থানায় মামলা করবো।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ | সময়: ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ