পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীতে আ’লীগের ঘরে ভাঙনের শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার : 
আগামী ২৯ ই মে অনুষ্ঠিত হবে পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের চারিদিকে বেষ্টিত ৩৩৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থান পবা উপজেলার। শহরের নিকটবর্তী উপজেলা হিসেবে পবা উপজেলা পরিষদের একটি আলাদা তাৎপর্য আছে। উপজেলা নির্বাচন ঘিরে মাঠ-ঘাট, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লা ও চায়ের আড্ডায় এখন জনসাধারণের মধ্যে চলছে আলোচনা সমালোচনা। রয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নিজ থেকেই স্থানীয় জনগণের মুখে মুখে প্রচারণাসহ দোয়া চেয়ে জনগণের দ্বারপ্রান্তে যাচ্ছেন কর্মী ও সমর্থকরা। বিশাল এই জনসংখ্যার উপজেলায় কে হবেন আগামী উপজেলা পরিষদের কর্নধার তথা চেয়ারম্যান, এই গুঞ্জন এখন সবার মুখে মুখে।

 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগে থেকেই নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে। সেই অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বয়কট করেছে দলটি। তাই পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে কোন প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে। তাদের ভিতরে রয়েছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী, রাজশাহী জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী খাঁন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক হোসেন ডাবলু, পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল বারী ভূলু, পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এমদাদুল হক, রাজশাহী জেলা স্বে”ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ ।

 

চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন থেকে ৭ জন প্রার্থী থাকায় নেতাকর্মীদের ভিতরে ইতিমধ্যে কোন্দলের দেখা দিয়েছে উপজেলা জুড়ে। বিভিন্ন সভা -সমাবেশে প্রার্থীরা একে অপরের নানামুখী সমালোচনায় তৎপর। অন্যের খারাপ দিক উল্লেখ করে নিজেকে ক্লিন ইমেজের দাবী করছেন প্রার্থীরা। এতে করে সাধারণ নেতাকর্মীদের ভিতরে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হচ্ছে। কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছেন কর্মীরা। আবার অনেকে দাবী করছেন এই প্রতিক বিহীন এই নির্বাচন হচ্ছে জনপ্রিয়তার লড়াই। যে নেতা সবচেয়ে জনপ্রিয়, যে নেতা কর্মীবান্ধব সে নেতাই বসবে উপজেলার চেয়ারে।

 

নওহাটা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন। তার কাছে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামনে উপজেলার ভোট আসছে। আমাদের দলেরই অনেক প্রার্থী। সবই তো আমাদের লোক। কাকে ভোট দিবো তা নিয়েই তো দ্বিধায় আছি। তবে আমাদের যদি প্রতিক নৌকা থাকতো তাহলে আমাদের কর্মীদের জন্য ভালো হতো। এখন নৌকা নাই তাই ভোটে কাজ করা আমাদের জন্য সমস্যা। একজনের পক্ষে কাজ করলে আরেকজন মন খারাপ করবে।

 

উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেন (কবিরাজ) তার কাছে নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত দিনে যে নেতা কর্মীদের সাথে ভালো ব্যবহার এবং কর্মীদের পাশে ছিলো তাকেই আমরা ভোট দিবো। আমাদের পবা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগে থেকেই অনেক যোগ্য প্রার্থী ভোট করছে, কিন্তু আমরা কর্মীরা তো উন্মুক্ত ভাবে কারো পক্ষেই কাজ করতে পারছি না। কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলি যে নেতার দ্বারা আমাদের উন্নয়ন হবে, সাংগঠনিক ভাবে দলের উন্নয়ন হবে সেই নেতাকেই আমরা ভোট দিয়ে জয়জুক্ত করবো।

 

নির্বাচনের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক আছে জানিয়ে উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহব্বায়ক সারোয়াও জাহান মিল্টন বলেন, ভোট নিয়ে আমরা সাধারণ কর্মীরা খুবই সমস্যায় আছি। এতগুলো প্রার্থী না হয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক যদি একজন প্রার্থী হতো তাহলে আমাদের ভোটের জন্য কাজ করতে সুবিধা হতো। তবে বেশি প্রার্থী হওয়ায় এখন পর্যন্ত কোন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি, কিš‘ আমি মনে করছি ভোট যত এগিয়ে আসছে তত দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা বাড়ছে।

 

 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী হওয়ায় দলীয় ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না প্রশ্ন করলে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন ফ্রী করে দিয়েছেন। এখানে কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব কিংবা কোন ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। যার বেশি যোগ্যতা আছে সেই নির্বাচনে জিতবে। আমাদের সংসদ সদস্য আছে, প্রেসিডিয়াম সদস্য আছে তারা নির্বাচনের পরিস্থিতি দেখছে।

 

 

নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পবা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠ সুন্দর আছে। আমাদের দল থেকে যারা প্রতিদ্বন্দ্বীতা তা করছে আমি মনে করি আমাদের কোন সমস্য কিংবা দলীয় ঐক্য ভাঙবে না। নির্বাচনে যার বেশি জনসর্মথন আছে সেই এগিয়ে থাকবে এটাই স্¦াভাবিক। আমি মাঠে-ঘাঠে ঘুরে জনগণের সাথে কথা বলে দেখেছি এই নির্বাচনে জনগণের স্বতস্ফুর্ত আগ্রহ আছে। আজকে আমাদের প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনে এক কর্মশালা ছিলো সেখানে ইসি রাশেদার কথা আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনি জানিয়েছেন এই নির্বাচন সুষ্ঠ এবং গ্রহণযোগ্য হবে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছের নির্বাচন সুষ্ঠ হবে। কিন্তু আমরা পবায় একটি জিনিস লক্ষ্য করছি সেটি হলো অনেকে বলে বেড়া”েছন তিনি ওমুক নেতার মনোনীত প্রাথী, ওমুক নেতা তাকে জনসর্মথন জানিয়েছে। এই নিয়ে সেই প্রার্থীরা জনমনে বিশৃঙ্খলা ছড়া”েছ। আমি এই বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্য আসাদ ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি তিনি আমাকে জানিয়েছেন নির্বাচন সুষ্ঠ হবে এবং যার বেশি জনপ্রিয়তা আছে সে জিতে আসুক সেটাই তিনি চান।

 

 

পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদুল হক নির্বাচনের বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে এটি কি ঠিক? আবার অনেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভিতরে দাড়িয়ে ভোট চাচ্ছে। কেউ কেউ আবার মোটরসাইকেলে শোডাউন দিচ্ছে। প্রতিক বরাদ্দের আগে কি এগুলো নির্বাচনের আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে প্রার্থীরা।

 

এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে এমদাদুল হক বলেন, না আমি কোন অভিযোগ জানায়নি। তবে আপনাদের মাধ্যমে বলছি।

 

প্রার্থী বেশি হওয়ায় দলের ভিতরে ভাঙনের সৃষ্টি হবে না জানিয়ে রাজশাহী জেলা স্বে”ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, নির্বাচনে প্রতিযোগীতা-প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে এটিই স্বাভাবিক। আমরা ভাই ভাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। যার বেশি জনপ্রিয়তা কিংবা যে নেতা বেশি কর্মীবান্ধব সে বিজয়ী হবে। এখানে আমাদের জন্য জনগণের কাছে পৌছাঁনো সহজ হলো। জনগণ বুঝতে পারবে কোন নেতা তাদের জন্য কাজ করছে। তবে আরেকটি বিষয় সেটি হলো আমাদের দলীয় কর্মীরা এখানে একটু বিভ্রান্ত। তার কারণ অনেকগুলো প্রার্থী হওয়ায় তারা কোন নেতার সাথে কাজ করবে। কিš‘ আমি মনে করি যে নেতার জনপ্রিয়তা আছে সেই নেতার সাথে কাজ করবে।

 

 

এইদিকে শনিবার(৪ই মে) সকালে রাজশাহীতে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা উপজেলা সুষ্ঠ হবে জানিয়ে বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠ করতে যে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন কমিশন সেটাই নিবে। কোন এমপি মন্ত্রী নির্বাচনের পক্ষঘাত চলবে না। আপনারা দয়া করে আপনাদের জায়গায় থাকেন। আপনার মান ইজ্জত, মর্যাদা আপনিই রক্ষা করবেন। প্রার্থীরা এমপিদের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে কারও সুবিধা নিলে দয়া করে সরে আসেন। এরকম অবস্থা যদি দাঁড়ায়, যদি অভিযোগ আসে তাহলে প্রার্থিতা বাতিলও হতে পারে।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৪ | সময়: ৬:১৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine