তীব্র গরম ও মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ রাবি শিক্ষার্থীরা 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
দেশের উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত থাকে রাজশাহী শহর। নগরায়ন এবং মহাসড়ক সংস্কারের নামে বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলায় এবারের তাপমাত্রা অসহনীয় অবস্থায় চলে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। অন্যদিকে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। আবাসিক হল থেকে শ্রেণিকক্ষ কিংবা প্রশাসনিক ভবন কোথাও স্বস্তি নেই।

 

ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরেই জন্ডিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে ভুগছে অনেক শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় এমন গরমের কারণে ঝুঁকি আরো বেড়ে গিয়েছে। গরমে সচেতনতা অবলম্বন করে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সশরীরে ক্লাস কিছুদিন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাপের কারণে দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করার পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করেছে।

সিদ্ধান্তটি শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে বলছেন, সিনিয়র শিক্ষকেরা। তারা জানান, ঠান্ডা পানির অভাবে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন রোগে ভুগছে। ছুটির লক্ষ্য তাপদাহ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা, কিš‘ সিদ্ধান্তটি যেন তার বিপরীত। গ্রীষ্মের ছুটি ঈদুল ফিতরের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হিট স্ট্রোকে মানুষ মারা যাচ্ছে, এতে শিক্ষার্থীরা বেশ ভীতসন্ত্রস্ত। এ অবস্থায়, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত অনলাইন ক্লাস দেওয়া নয়তো গ্রীষ্মেকালীন ছুটি বহাল রাখা।

 

মশা আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এক শিক্ষার্থী ফেসবুক গ্রুপ ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ এ লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কি কোন ভাবে সার্কাসের জায়গা হয়ে গেলো নাকি? শিক্ষার্থীরা ঠিক যখন রান্না করবে তখন থাকে না বিদ্যুৎ। গত কয়েকদিন যাবত হলের ওয়াইফাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। লগইনই হচ্ছে না (হবিবুর রহমান হল)। অথচ এই ওয়াইফাই বাবদ শিক্ষার্থীরা সামান্য হলেও টাকা দেয়। এসব বিষয়ে হল প্রশাসন,বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। আবার ক্যাম্পাসে এত এত শিক্ষার্থী বান্ধব সংগঠনের ব্যানার দেখা যায়। কিন্তু তাদের মূল কাজে তেমন কোন সাড়া দেখছি না। আর আমি/আমরা শিক্ষার্থীরাও আজ-কাল লেজ কাটা হয়ে গেছি। যেমন চলছে এমন শেষ হলেই হয় এই ভাবনায় চলছে দিন।। বিশ্ববিদ্যালয় যেনো একটা সার্কাস আর আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা হয়েছি এক এক জন জোকার। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সমস্যা গুলো দ্রুত সমাধান করার জন্য।

 

এবিষয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিত অন্তরের বলেন, বর্তমানে যেমন গরম বেড়েছে তার সাথে সাথে মশার উৎপাতও বেড়ে গেছে। প্রশাসনের উচিত অতিদ্রুত মশক নিধন স্প্রে ক্যাম্পাসে দেওয়া। এছাড়াও ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবনগুলোতে শুদ্ধ পানির প্রচুর অভাব রয়েছে। সেই জায়গাগুলোতে শুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা।

 

গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তীব্র গরম আর তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দিয়েছে বা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করেছে। যা দরকার ছিল। আমি মনে করি এটাতে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

 

তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের বেশি পরিমাণ পানি ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, গরমে আমাদের নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে। বাহিরের কোনো খাবার এই সময়ে আমাদের খাওয়া উচিত না। আমরা বিভিন্ন ভাবে লিফলেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। মেডিকেলে পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও বলেন, গরমের এই সময়টাতে প্রচুর মশার উৎপাত বেড়ে যায়। মশক নিধন বিষয়ে আমাদের একটা কমিটি আছে। আমি গত বৃহস্পতিবার তাদেরকে এই বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছি। অতিদ্রুত মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করা হবে।

 

সানশাইন / শামি

 


প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৪ | সময়: ৯:৩২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine