হিমাগারে আলু মজুদের খবর নিচ্ছে পুলিশ

মাহফুজুর রহমান, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় স্টোরজাত আলুর পরিমান জানতে পুলিশ আলুর মালিকদের ফোন দিচ্ছেন। এতে করে স্টোরে রাখা আলুর মালিকদের মধ্যে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে বাগমারা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার জানান, বিষয়টা নিয়ে কোন ভয়ের কারণ নেই। উপজেলায় ৪টি স্টোরে আলুর ধারন ক্ষমতা কত বস্তা, কি পরিমান আলু রাখা আছে তা নিধারণই মূল লক্ষ্য। সরকারী ভাবে আলুর পরিমান জানতে স্টোরে খোঁজ করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী ছাড়া স্থানীয় কৃষকরা বীজ আলু একজন এজেন্ট মালিকের মাধ্যমে স্টোরজাত করে থাকেন। এতে কৃষকদের কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
জানা গেছে, বাগমারা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় মানুষ অধিকাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল। অতিরিক্ত শ্রমিকের মজুরী ও দফায় দফায় সার, কীটনাশক ও ডিজেলের বাড়তি দামে কৃষিতে লাভ না হয়ে লোকশান গুণতে হচ্ছে।
বিশেষ করে এই এলাকায় আলু চাষের মাটি উপযোগী। উর্ব্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় প্রচুর পরিমানে আলু চাষ হয়। বিগত বছর আলুর ভালো ফলন হলেও লাভের মুখ দেখেনি। প্রতিবারেই লোকশান গুণতে হয়েছে। তবে এ বছর আলুর বাড়তি দামে বেশ পুষিয়েছে বলে কৃষকরা দাবি করেছেন।
এদিকে এবারে দেশে হঠাৎ করে আলুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় দুষছেন আলু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের। এই ধারাবাহিকতায় বাগমারায় স্টোরজাত আলুর পরিমান নির্ধারণ করতে সরকারী ভাবে পুলিশসহ গোয়েন্দ সংস্থার লোকজন উঠে পড়ে লেগেছে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।
উপজেলায় অবস্থিত নাটোর কোল্ড স্টোরে কর্মরত ব্যবস্থাপক হানিফ উদ্দিন জানান, স্টোরে কোন এজেন্টের কত বস্তা আলু রয়েছে তা জানতে বুধবার থানার এসআই খোলিল আসেন। বিষয়টি জানতে তিনি আলু রাখার মালিকদের আইডি চান।
পরে তিনি সংশ্লিষ্ট আলুর মালিকদের ফোন নম্বর নিয়ে তাদেরকে স্টোরে তথ্য হাল নাগাদের তাগিদ করেন। এ বিষয়টি কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে সাংবাদিকদের বিষয়টা জানাতে ফোন করেন। তারা তাদের আলুর কি অবস্থা হবে এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
কৃষকরা দাবি করে বলেন, তাদের আলু ব্যবসার জন্য না। কোন গ্রামের কৃষকদের কাছে এক জোটে বীজ আলু রাখেন, যা আগামীতে রোপন করা হবে। মজুতকৃত আলু ব্যবসায়ী গ্রাম এলাকায় নেই বলে তারা দাবি করেন।
গ্রামের লোক স্বল্প পুঁজির, তারা মওসুমে আলু বিক্রি করে বাঁকি আলু স্টোরজাত করে থাকেন। অনেকে বীজ আলু বিক্রি করে বাড়তি টাকা দিয়ে আলুচাষে সার, ডিজেল, কটিনাশক ও শ্রমিকের মুজুরী কাজে ব্যায় করেন।
বালানগর গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন জানান, মওসুমের শুরুতে নতুন আলুর দাম বেশী হলেও স্টোরের মজুতকৃত আলুর মূল্য হ্রাস ও হিমাগার ভিত্তিক চক্রের কারণে কৃষকরা আলু নিয়ে প্রায় বছর বিপাকে পড়তে হয়। এলাকায় যে পরিমান স্টোর রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম সংকলণ ক্ষমতা।
উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌর সভা মিলে ৪টি স্টোরে ৮ লক্ষ বস্তা রাখা যায়। স্টোরগুলোর ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত আলু হওয়ার কারণে এলাকার আলুচাষিরা আলুর স্টোরগুলোর (হিমাগার) মধ্যস্বত্ব ভোগী সিন্ডিকেটের হাতে ধরাশায় হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মওসুূমে আলু বিক্রির পর অতিরিক্ত আলু এলাকার কৃষকরা স্টোরজাত করে। সময়ে ওই আলু বিক্রি করে বাড়তি টাকা দিয়ে পুনরায় আলুচাষে নামেন তারা।
এখানে কোন বড় ধরনের ব্যবসায়ী নেই, যদি কেউ থাকে তাদের বিষয় আলাদা। আমরা যারা কৃষক এক জোট করে গ্রামের কাউকে এজেন্ট করে আলু রাখি। এই যৌর্থ আলু মজুতের মধ্যে পড়ে না বলে তারা জানান।


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ | সময়: ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ