রাবি শিক্ষার্থীর কানের পর্দা ফাটালো দুই ছাত্রলীগ নেতা

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের অতিথিকক্ষে এই ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম। তিনি শের-ই-বাংলা হলের ১২৩ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং হল ছাত্রলীগের গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। তবে বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তিনি।
অপরদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের দুই নেতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস ও সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক উপসম্পাদক আল আমিন। আল আমিন শের-ই-বাংলা হলে অবৈধভাবে থাকেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রক্টর বরাবর দেয়া ভুক্তভোগী নুজরুলের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে শের-ই বাংলা হলের রিডিং রুমে পড়ছিলেন নজরুল। পাশেই উ”চ স্বরে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক আল-আমিন। নজরুল তাঁকে জোরে কথা বলতে নিষেধ করায় আল আমিন তাঁর ওপর চড়াও হন। দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এ সময় নজরুলকে হুমকি দিয়ে আল আমিন বলেন, ‘তুই জানিস আমি তোর কী অব¯’া করতে পারি?’
এরপর আল আমিন বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমসকে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর দুজনে মিলে নজরুলকে শের-ই-বাংলা হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে নজরুল মাটিতে পড়ে যান এবং তাঁর কান দিয়ে রক্ত বের হয়। এ বিষয়ে কোথাও অভিযোগ জানালে অথবা কাউকে বললে তাঁকে আবারও মারা হবে বলে হুমকি দিয়ে তাঁরা চলে যান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাম কানে আগে থেকেই সমস্যা ছিল। আর সেই কানেই আঘাত করার ফলে কান দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয় ও আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক আমাকে বলেন, “আমার কানের যে সমস্যা হয়েছে তা সেরে তুলতে বেশ সময় লাগবে এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করাতে হবে।’ ”
ক্ষোভ জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, আজ আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণেই আমার এই অব¯’া। বর্তমানে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং শারীরিকভাবে আমি শ্রবণ অনুভূতিহীন। বর্তমানে আমি প্রচুর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার দাবি তারা যেন দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন বলেন, ‘সেদিন আমাদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়। তবে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরে সেটি জেমস ভাই ও প্রভোস্ট স্যার মিলে সমাধান করে দিয়েছেন। এখন তিনি তৃতীয় কোনো পক্ষের প্ররোচনায় সে এই অভিযোগটি করেছে। আর তাঁর বাম কানের সমস্যাটা নতুন নয়। তিনি ৩-৪ বছর ধরে চিকিৎসা করাচ্ছেন।’
বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমস বলেন, ‘গত ১ আগস্ট রাতে নজরুল ইসলাম ও আল আমিনের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে আল আমিন আমাকে মোবাইল ফোনে কল করেন। পরে আমি সেখানে উপ¯ি’ত হয়ে দুজনের মধ্যে মিটমাট করে দিই। পরদিন হল প্রভোস্ট স্যার তাঁদেরকে ডেকে অফিশিয়ালি এই সমস্যার মীমাংসা করে দেন। আমি সেখানে উপ¯ি’ত হওয়ার পর কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
মারধর করা না হলে কেন অতিথি কক্ষের দরজা আটকানো হয়েছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে জেমস বলেন, আমরা দরজা লাগিয়ে দেইনি। উৎসুক মানুষের ভীড় এড়াতে দরজা একটু এগিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
যদিও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সে সময়ে হলে অব¯’ানরত প্রহরী সূত্রে জানা গেছে, অতিথি কক্ষের দরজা লাগিয়ে নজরুলকে নিয়ে বসেছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে জেমসসহ তার অনুসারীরাও ছিলেন। দরজা লাগানো থাকায় ভিতরে ঠিক কি হয়েছে সে বিষয়ে জানাতে পারেননি হল প্রহরীরা।
এ বিষয়ে শের-ই বাংলা হল প্রাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় দুই পক্ষই আমার কাছে লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ করেনি। তবে নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে ঘটনা জানার পর আমি নিজেই দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। কিন্তু সেসময় নজরুল আমাকে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানায়নি। তবে হল প্রাধ্যক্ষ হিসেবে তার নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করব। এ বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি এবং হলের নিরাপত্তাকর্মীদেরও নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যব¯’া গ্রহণ করব। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হবে। আর অভিযুক্ত আল আমিন যদি আমার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না হয়ে থাকে তাহলে তাকেও হল থেকে বের করার ব্যবস্থা করব।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘এটি যেহেতু হলের বিষয় তাই এটি হল প্রাধ্যক্ষ সমাধান করবেন। তাঁরা আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। আমি তাকে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর সেই অভিযোগ জমা দিতে বলেছি।’


প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৩ | সময়: ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ