লালপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ 

লালপুর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে খরচ কমিয়ে রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে ও চাষে বাণিজ্যক ও আধুনিকীকরণ করতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় মাটি বাহিত বালাই প্রতিরোধী করে ও সেচে সাশ্রয়ী হয়। মালচিং পদ্ধতিতে ফসল চাষ করে খরচ কম হচ্ছে এবং উৎপাদিত ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারেও মালচিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজির চাহিদা ভালো থাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এ পদ্ধতি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

সরেজমিনে উপজেলার ডহরশৈলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পলিমালচ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে জমি ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তার উপরে সবুজ টমেটো গাছে ছেয়ে আছে। গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা ও পাকা টমেটো। এ পদ্ধতিতে ফসলে কীটনাশকের ব্যবহার কম হওয়ায় উৎপাদিত সবজির বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় বিক্রিও হচ্ছে বেশি দামে।

 

এসময় কথা হয় মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষী ডহরশৈলা গ্রামের কৃষক মোঃ আমছের আলী সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে আবাদ করে লোকসান হচ্ছিল। আগে সবজিতে ৪/৫ টি সেচ লাগতো। মালচিং ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী মালচিং পদ্ধতির প্রশিক্ষণ নিয়ে এবারই প্রথমে প্রায় ৩২ বিঘা জমিতে হাইব্রিড মিরাক্কেল জাতের টমেটো চাষ করছেন। টমেটো গাছ অনেক বড় ও সবল হয়েছে। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র দুটি সেচেই আবাদ হচ্ছে। আগাছাও কম।

 

কৃষক আমছের আলী বলেন, গাছগুলি দেখতে সজিব ও সুন্দর হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় গাছে বেশি টমেটো হয়েছে। বাজারে এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত টমেটোর কদর অনেক বেশি, দামও ভালো। এ পদ্ধতি ব্যবহারে খরচ অনেক কম এবং কীটনাশকের ব্যবহারও কম হয়েছে । মাটি বাহিত রোগ বালাই নেই। সেচ খরচও হচ্ছে না।’

 

 

আমছের আলী আরো বলেন, তার ৩২ বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করেত খরচ হয়েছে ৮ লাখ টাকা। ইতি মধ্যে ২০ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করা হয়েছে। এখনও গাছে পর্যাপ্ত টমেটো রয়েছে। আশা করা হচ্ছে আরো ৩ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করা সম্ভব হবে।’

 

 

মালচিং মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোড়া, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়া হয় তখন তাকে বলে মালচ। আর এ পদ্ধতিটিকে বলা হয় মালচিং। চাষে বাণিজ্য ও আধুনিকীকরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক মালচিং-এর ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে।

 

লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, লালপুর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। ১ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামের শসা চাষী কৃষক রুহুল আমিন জানান, এই প্রথম তিনি মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ৫০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছেন। আগে জমিতে সেচ ও আগাছা দমনে সময় ও খরচ বেশি লাগতো। লোকসান হচ্ছিল। এখন আর তা লাগে না। এই পদ্ধতিতে শসা চাষকরায় আবাদ ভালো হচ্ছে এবং খরচও কমেছে। গাছগুলি দেখতে সজিব ও সুন্দর হয়েছে। আশা করছেন অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশি শসা উৎপাদন হবে।

 

 

রুহুল আমিন আরো জানান, তার মালচিং পদ্ধতি শসার চাষ দেখে এই এলাকার অনেক কৃষকই এই পদ্ধতিতে ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

 

লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় বলেন, আবাদের খরচ কমিয়ে রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে লালপুরে বাণিজ্যিক ভাবে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষআবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকদের উদ্বুগ্ধ করতে এবং কৃষক পর্যায়ে মালচিং পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এবছর আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারনের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৫ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে লালপুর উপজেলায় ব্যপক ভাবে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ হবে।’

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৪ | সময়: ১০:২২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine