বড়াইগ্রামে স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ, ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক,বড়াইগ্রাম : নাটোরের বড়াইগ্রামে এক স্কুল ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে প্রেমিকসহ ছয় দুর্বৃত্ত মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনার এক মাস পরও কোন আইনি সহায়তা পায়নি ভূক্তভোগী পরিবার ।

 

স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল ও কিছু নামধারী সাংবাদিকদের অপকৌশলের পাশাপাশি ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকির কারণে এমন বর্বরোচিত ঘটনার দীর্ঘ ২৬ দিন পর গত ২২ ফেব্রুয়ারী ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে প্রেমিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে নাটোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন। তবে আদালতে মামলা দায়ের হলেও রোববার পর্যন্ত প্রশাসনের কোন কর্তাব্যক্তি ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তদন্তে না নামায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

মামলার আসামীরা হলেন, বড়াইগ্রামের জোয়াড়ী ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে পারভেজ (২২), মিন্টু মিয়ার ছেলে সাগর (২৩), শ্রী রনজিতের ছেলে প্রসনজিত (২২), শ্রী রতনের ছেলে জিত কুমার (২১), শ্রী পরিমলের ছেলে কৃষ্ণ কুমার (২০) ও বাগাতিপাড়া উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের বাসার ভাড়াটিয়া ও আনিছ আলীর ছেলে মহন আলী (২৪)।

 

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে বাগাতিপাড়ার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ওই ছাত্রীর (১৫) সঙ্গে বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম কেরাণীর ছেলে কলেজ ছাত্র পারভেজের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ২৭ জানুয়ারী সন্ধ্যার একটু আগে প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি যাবার পথে পারভেজ তার সঙ্গে দেখা করে। এ সময় সে তার তাদের প্রেমের সম্পর্কটি তার বাড়িতে জানিয়েছে এবং তার বাবা-মা দেখতে চেয়েছে বলে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় ফাঁকা রাস্তায় গেলে আকস্মিক পারভেজসহ অন্যরা তাকে মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক রাস্তার পাশে পেয়ারা বাগানে নিয়ে যায় এবং সেখানে পালাক্রমে ছয়জন তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সেখানে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী পাশবিক নির্যাতনে মেয়েটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে ওই লম্পটরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মেয়েটির বাড়ির পাশের কাঁচা রাস্তায় ফেলে রেখে আসে। পরে রাতে পথচারীরা মেয়েটিকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে খবর দিলে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে এবং পরে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

 

 

নির্যাতিতা মেয়েটির পিতা জানান, জ্ঞান ফিরলে পারভেজসহ ৬ বন্ধু পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে বলে তার মেয়ে জানিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে লালপুরের একজন ইউপি চেয়ারম্যান এবং প্রধান আসামী পারভেজের মামা ওয়ালিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা মিজানুর রহমান বিষয়টি ধাপাচাপা দিতে প্রভাবশালী লোকজনসহ কয়েকজন সাংবাদিককে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন। এরা নানামুখী প্রভাব বিস্তার করে সময়মতো আমাদেরকে থানাতেও যেতে দেয়নি। মেয়ের বোন জানান, আমরা একাধিকবার থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি।

 

 

তবে বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ শফিউল আযম খাঁন জানান, এ ধরণের অভিযোগ নিয়ে কেউ থানায় আসেনি। পরে খবর পেয়ে আমরা নিজেরা খোঁজ নিলে তারা আদালতে মামলা করেছেন বলে জানান। এ ব্যাপারে আসামীদের আটকসহ যে কোন সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

 

এদিকে, আদালতে মামলা দায়েরের পর ঘটনাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নাটোর কার্যালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে ১১ দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যাওয়া বা ভূক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেননি।

 

এ ব্যাপারে পিবিআই নাটোর এর পুলিশ সুপার মো. শরীফ উদ্দিন রোববার জানান, এখন পর্যন্ত আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা আমাদের দপ্তরে এসে পৌঁছায়নি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৪ | সময়: ৬:১০ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর