দূর্গাপুরে সমাবেশ ডেকে সরকার বিরোধী বক্তব্য দিলেন বিএনপি নেতারা

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: রাজশাহীর দুর্গাপুর ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজাহার আলী। অথচ ওই মাদ্রাসা মাঠে আলোচনা সভার নামে সমাবেশ করে সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে বিএনপির একাংশের নেতারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপির একাংশের (নাদিম মোস্তফা গ্রুপ) নেতারা। সভা শেষে র‍্যালী করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দিয়ে বিএনপি নেতাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। বিএনপির এই আলোচনা সভা উপলক্ষে দিনভর উত্তেজনা দেখা দিলেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফার অনুসারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাদের আয়োজনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপুর সদরে অবস্থিত ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে এই আয়োজন করে বিএনপি। আলোচনা সভার নামে সমাবেশ করে সরকার বিরোধী বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি নেতারা বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, সরকার দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়িয়ে জনগণকে বেকায়দায় ফেলেছে। এই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আজ জিম্মি। মানুষের বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। ভোটের অধিকার হারিয়েছে মানুষ।
বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করছে। আবারও ক্ষমতায় যেতে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবেনা। রাজপথ দখল করে এই সরকারের পতন ঘটাতে নেতাকর্মীদের বিভেদ ভুলে একসাথে কাজ করতে হবে।

সমাবেশ শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরা শোডাউন দিতে চাইলেও পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এ সময় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা পুলিশের উপরে চড়াও হন। পরে বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

এদিকে, সমাবেশের আগে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সরকার বিরোধী মিছিল ও শোডাউন দিতে দেখা গেছে। মিছিলে সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার পক্ষে এবং সরকারের বিপক্ষে স্লোগান দেয়া হয়।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান আয়নালের সভাপতিত্বে ও পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আশরাফুল কবীর বুলু।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম আকবর আলী বাবলু, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ মন্ডল, নওপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজাদ রেজাউল করিম রেজা, কিসমত গণকৈড় ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ রানা মাসুদ, পানানগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম খান রবিন, জয়নগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইস্রাফিল হোসেন, পৌর বিএনপির সাবেক আক্তারুজ্জামান লাবু ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিয়াউল হক রতন।

আলোচনা সভার নামে বিএনপির সমাবেশে সরকার বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও বিএনপিকে প্রতিহত করতে মাঠে ছিলেন না কেউ। তবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক শাকিল খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা থানা মোড়ে অবস্থান নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রবীন নেতা বলেন, বিএনপি সভা সমাবেশ করতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ চেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আবেদন করেছিলেন বলে শুনেছি। কিন্তু অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বিএনপির আবেদন নাকচ করা হলেও ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনুমতি দিয়েছেন। মাঝে মধ্যেই ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে সরকার বিরোধী সভা সমাবেশ করে বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক ও স্পর্শকাতর। ওই মাদ্রাসাটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজাহার আলী। তিনি কিভাবে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিলেন তা খতিয়ে দেখা দরকার।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজাহার আলী বলেন, ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে সভা করার জন্য বুধবার দুপুরে বিএনপি নেতা আশরাফুল কবীর বুলু আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তাঁকে মাঠ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনও আমাকে ফোন করেছিলেন তাঁকেও মাঠ না দিতে বলেছিলাম। বিষয়টি থানার ওসি সাহেবকে জানিয়েছিলাম। এরপর কিভাবে বিএনপি সভা করেছে বিষয়টি আমার জানা নেই।

ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনের সাথে কথা বলতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) মহোদয়ের কাছে আবেদন করেছিলেন বিএনপি একাংশের (নাদিম গ্রুপ) নেতারা। শর্ত সাপেক্ষে বিএনপি নেতাদের সভা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং সভাস্থল সহ বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিএনপির সভা শেষ হয়েছে বলেও জানান ওসি।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ | সময়: ১০:৩১ অপরাহ্ণ | সানশাইন