বিডি ক্লিনের সহযোগিতায় রাজশাহীর একটি শহিদ মিনার ফিরে পেলো আপন সৌন্দর্য্য

স্টাফ রিপোর্টার : 
বুধবার সকাল ৯টা। এক দল তরুন-তরুনী হাতে কোদাল, ডালা, ঝাড়ু, হাসুয়া নিয়ে রাজশাহীর বিআরটিএ অফিসের সামনে হাজির। পোষাকেও তারা আলাদা। হাতে গ্লোবস, মুখে মাস্ক পরে দাঁড়ালেন লাইনে। সংখ্যায় তারা ১৯ থেকে ২১ জন। শুরু হলো শপথবাক্য পাঠ। এ শপথ শেষে হাতে কোদাল, ঝাড়ু, ডালা, হাসুয়া নিয়ে লেগে গেলেন পরিস্কার পরি”ছন্নতার কাজে।

দেখা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারী, ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চ এলে তবেই শহীদ মিনারের খোঁজ পড়ে। আর বছরের বাকি সময়গুলোর খোঁজ থাকে না এসব শহীদ মিনারগুলোর। রাজশাহীর বিআরটিএ অফিসের মুল ফটকে রয়েছে একটি শহীদ মিনার। এর ব্যতিক্রম নয় এ শহীদ মিনারও। এ শহীদ মিনারের পেছনে সামান্য জায়গা থাকলেও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এই জায়গায় লোকজন ময়লা আবর্জনা ফেলার পাশাপাশি প্রস্রাব করতেও দ্বিধাবোধ করে না। আর সামনে ময়লা আবর্জনার স্তুপ তো রয়েছেই। ময়লা-আবর্জনার সেই স্তুপ পরিস্কারে নেমেছে রাজশাহীর বিভিন্ন কলেজের এসব শিক্ষার্থীরা। তারা পড়াশোনার পাশাপাশি এ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে থাকেন।

 

 

নতুনভাবে রাঙিয়ে তুলেছে শহিদ মিনারকে বিডি ক্লিনের সদস্যরা –  সানশাইন

 

এসব শিক্ষার্থীরা সবাই মূলত অরাজনৈতিক ও অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন এর সদস্য। ‘পরি”ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে’ শ্লোগান নিয়ে তারা নেমেছেন পরিস্কার পরিচ্ছ ন্নতার কাজে। সারা দেশের ন্যায় তারা ২১ ফেব্রুয়ারী উপলক্ষ্যে রাজশাহীর শহীদ মিনারগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। বিডি ক্লিন সংঘঠনের এসব শিক্ষার্থীদের সাথে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় যোগ দিয়েছেন রাজশাহীর স্বনামধন্য ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান আল-আকসা ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান কাজী। মূলত তিনি স্বেচ্ছাসেবী বিডি ক্লিন সংগঠনের রাজশাহীর উপদেস্টা হিসাবে কাজ করছেন। সকাল ৯টায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজের আগে আল-আকসা ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিডি ক্লিন সংগঠনের উপদেস্টা মিজানুর রহমান কাজী সকল সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। এরপর শুরু হয় বিআরটিএ অফিসের সামনে অবস্থিত শহীদ মিনার ও আশপাশে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনার স্তুপ পরিষ্কারের কাজ।

 

বিডি ক্লিন সংগঠনের রাজশাহীর উপদেসস্টা মিজানুর রহমান কাজী বলেন, রাজশাহী নগরীকে গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি, এডুকেশন সিটি হেলথ হিসাবে উপহার দিয়েছেন আমাদের রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। মেয়রের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ রাজশাহী একটি পরিচ্ছন্ন নগরীর রুপ পেয়েছে। শুধু দেশেই নয় মেয়রের উদ্যোগেই আজ বিশ্বের কাছে রাজশাহী একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা তার এই ক্লিন সিটি আরো ক্লিন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

 

বিশেষ কয়েকটি দিন আমরা শহীদ মিনার ব্যবহার করি। এরপর আর এই শহীদ মিনারের খোঁজ থাকে না। আমরা বিডি ক্লিন সংগঠনের পক্ষ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারীর আগেই যতটা সম্ভব রাজশাহীর শহীদ মিনারগুলো পরিস্কার করবো। রাজশাহী আমাদের পরি”ছন্ন শহর। কিš‘ এই শহরের গুরুত্বপূর্ন অনেক স্থান অপরিস্কার আবর্জনায় পরিপুর্ণ। আমাদের এ শহরকে আমরা সবখানেই পরিষ্কার রাখতে চাই। সেই লক্ষ্যে বিডি ক্লিন কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমরা সবাই যদি নিজ জায়গা থেকে পরিস্কার পরিন্নতার বিষয়ে সচেতন হই বা হাত বাড়িয়ে দেই, তাহলে সোনার বাংলাদেশে কোথায় আবর্জনা বা ময়লা থাকবে না। আগামী প্রজন্ম পাবে একটি পরিচ্ছন্ন দেশ। তিনি আরো বলেন, বিআরটিএ শহীদ মিনার থেকে আমাদের কার্যক্রম শুরু হলো। এই শহীদ মিনার পরিস্কার করার পাশাপাশি রং ও সবুজায়ন করে একটি পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারে রুপান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য। এমন কাজে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।

 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিডি ক্লিন রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত সমন্বয়ক সাহাদাত হোসেন, জেলা সহ-সমন্বয়ক ইশতিয়াক আহমাদ, উপ-সমন্বয়ক আল সাকিব নিরব ও আরিফুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সদস্য ইসরাত জাহান পপি, কায়েস আহমেদ, সোহেল রানা, আরিফ, আয়শাসহ অন্যান্য সদস্যরা।

 

উল্লেখ্য, ‘পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে’ স্লোগান নিয়ে ২০১৬ সালের ৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় অরাজনৈতিক ও অলাভজনক স্বে”ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন। দেশের ৫৯টি জেলা ও ১৫০টির বেশি উপজেলায় বিডি ক্লিনের সদস্য রয়েছে ৪৪ হাজারের বেশি। সংগঠনের সদস্যরা নিজ নিজ জেলা-উপজেলায় সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে স্থানীয় একটি অপরিষ্কার স্থান নির্বাচন করে তা পরিষ্কার এবং সবুজায়ন করে থাকেন।

সানশাইন /শামি


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪ | সময়: ৯:৫৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine