খেঁজুরের লালি-গুড় তৈরি করে চলে তাদের সংসার

রাণীনগর প্রতিনিধি: কোন পরিচর্চা ছাড়াই রাস্তা-ঘাট ও গোরস্থানে বেড়ে উঠা খেঁজুর গাছের রস সংগ্রহ করে লালি-গুড় তৈরি ও বিক্রি করে সংসার চলে রাণীনগরের আতা এবং হাসুর।
এ এলাকার গাছিরা বিকেল নাগাদ হাতে দা নিয়ে কোমরে দঁড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছের নির্দিষ্ট জায়গায় ছাল তোলা ও নলি বসানোর জন্য চেঁছে মাটির শূন্য হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেয়। পরদিন ভোরে খেজুর রস সংগ্রহ করে বড় কড়ায়ে জ্বাল করে লালি ও গুড় তৈরি করে। এই অঞ্চলের খেঁজুরের রস থেকে তৈরি লালি বেশ প্রসিদ্ধ, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় পার্শ্ববর্তী অন্যান্য এলাকায়। খেজুরের লালি দিয়ে শীত মৌসুমে হরেক রকমের মজাদার পিঠা-পুলি তৈরি করা হয় যা খেতে ভীষন স্বাদ।
রাণীনগর উপজেলা সদরের সিম্বা গ্রামের গাছি আতাউর রহমান আতা(৭০) প্রায় ৪১ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছেন। আর হাসু আকন্দ(৩৬) জানেন যে, এই পেশার ভবিষ্যৎ অন্ধকার তবুও বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারেননি। ছোট বেলা থেকে তার বাবার সঙ্গে থেকে এ কাজ শিখেছেন তিনি।তাই আজও আঁকড়ে ধরে আছেন এই পেশা।
আতা, হাসু ছাড়াও বেশ কয়েকজন গাছিরা বলছেন, আগের মতো শত শত খেজুর গাছের সারিও নাই আর জমজমাট ব্যবসাও নেই। তারপরও যে গাছ আছে শীতের শুরুতে আমরা গাছগুলো রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা শুরু করি এবং রস সংগ্রহ করে লালি গুড় তৈরির কাজ করি, এ কাজ চলে প্রায় তিন মাস।
বছরের অন্যান্য সময় মানুষের তাল গাছ, নারিকেল গাছ ঝুড়ে দেওয়া সহ বিভিন্ন লোকের কাটা গাছ কুড়াল দিয়ে চিরে জ্বালানির জন্য কড়ি করার কাজ করে আমাদের সংসার চলে। বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অগ্রহায়ণ, পৌষ এবং মাঘ মাসের শেষ অবদি এই কাজ চলে। আর বেচা-কেনা হয় আরো প্রায় দুই আড়াই মাস।
উপজেলার সিম্বা গ্রামের মাহমুদ হাসান শিখন, রুহেল খন্দকার সহ অনেকেই বলেন, গাছিদের বাড়ি থেকেই আমরা রস, লালি ও গুড় ক্রয় করে ক্ষীর, পায়েস এবং বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি সহ বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করি থাকি। বর্তমানে প্রতি কেজি লালি ১৬০ টাকা এবং গুড় বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দর। বর্তমান বাজারে গুড়ের চেয়ে লালির চাহিদা বেশি।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ | সময়: ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ