একটানা শীতে কৃষিতে বিরুপ প্রভাব সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টার : টানা শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর মানুষ। সকালের ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে কৃষিতে প্রভাব ফেলেছে এ অঞ্চলে। বেলা ১০ টার পর ঝলমল রোদ উঠলেও তাপ ছড়াতে পারছেন না। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমছেই।
সর্বশেষ রবিবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরেক দফা করে রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। ভোর ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটি এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লতিফা হেলেন জানান, আগের দিন শনিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে রাজশাহীতে প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমলেও খোলা রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। গত ১৬ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কোনো জেলার দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস দেখে মাউশির উপপরিচালকেরা দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে না ওঠা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেবেন বলেও ওই চিঠিতে জানানো হয়।
এই নির্দেশনা পাওয়ার পর গত ২১ ও ২২ জানুয়ারি রাজশাহীর মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী। এ ছাড়া রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের নির্দেশনায় ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও বন্ধ রাখা হয়।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, গত ২১ থেকে ২৬ জানুয়ারি রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ১০ ডিগ্রি, ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি, ৯ ডিগ্রি, ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টার দিকে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আর গত শনিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রবিবার তা ৭ ডিগ্রিতে নামে।
এমন তাপমাত্রায়ও স্কুল খোলা রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে তাপমাত্রা একটু কম থাকলেও দুপুর ১২টার মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে। আকাশে রোদ আছে, সমস্যা হবে না। সে কারণে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘স্কুল তো খোলে সকাল ১০টায়। আর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ভোর ৬টায়। এর মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যেসব সরকারি স্কুলে একাধিক শিফট আছে, তাদেরও সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু করতে বলা হয়েছে। মাউশির উপপরিচালকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা এভাবে স্কুল খোলা রাখছি।’
মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, শীতের কারণে স্কুল বন্ধ নিয়ে মাউশির নতুন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে আগের চিঠি মোতাবেকই স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে। ওই চিঠিতে লেখা আছে ‘দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে স্কুল বন্ধ রাখতে হবে।’ দিনের বেলা তো রাজশাহীর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকে না। শুধু ভোরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে থাকে।
তিনি বলেন, ভোরে তাপমাত্রা একটু কম থাকলেও সারা দিন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রোদ উঠে যাচ্ছে। তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। তাই এতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করার কারণ নেই। সে কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, ‘দুই দিন ধরে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর আগে ছিল মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এদিকে টানা শীতে বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিতেও বিরুপ প্রভাব পড়েছে। বোরোর বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, কথায় আছে ‘মাঘের শীতে, বাঘ কাঁপে’। সেই মাঘ মাসের ১৫ তারিখ। প্রচন্ড শীত। তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্থ। শীতের দাপট যেন কমছেই না। প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল রবিবার ঈশ্বরদীতে রেকর্ড শীত অনুভূত হয়েছে। চলতি শীত মৌসুমে গতকাল রবিবার ঈশ্বরদী ৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছরে সর্বনিম্ন। গত ১৫ দিনের বেশিরভাগই দিনেই সুর্য্যরে দেখা মেলেনী। দুই একদিন সূর্য্যরে দেখা মিললেও হয়েছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। দিনের বেলায় তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও সন্ধ্যা হতেই বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। হাঁড় কাঁপানো শীতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মোঃ নাজমুল হাসান জানান, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শীত প্রধান এলাকা ঈশ্বরদীতে গতকাল রবিবার (২৮ জানুয়ারী) ৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারী ৮.৫ এবং ২৬ জানুয়ারী ৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তিনি আরও জানান, চলতি ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে শীতের তীব্রতা থাকবে। এদিকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে থাকলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কর্ম কোলাহলেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।
হাঁড় কাঁপানো শীতে ঈশ্বরদীর আশ-পাশের অঞ্চলে শীত জনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরে ঘরে লেগে আছে স্বর্দি, কাশি সহ ঠান্ডায় সৃষ্ট রোগ বালাই। বিশেষ করে ছোট্ট শিশুদের রোগের প্রকোপ বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিশু রোগের বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে শিশু রোগীদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। শীত জনিত কারণে অনেক বৃদ্ধ মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে তীব্র কুয়াশার ফলে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায় ছোট খাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। গত শনিবার দাশুড়িয়া-কুষ্টিয়া মহাসড়কের মিরকামারী মুন্নার মোড় এলাকায় ঘন কুয়াশার কারণে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রো বাসের সংঘর্ষে ২ জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আরও ৩ জন গুরুতর আহত হয়েছে।
সূর্যের দেখা না মেলায় কিছু কিছু ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। কনকনে শীতে খেটে খাওয়া মানুষরাও বেকার হয়ে পড়েছে। পথ শিশু ও ছিন্নমূল মানুষদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ | সময়: ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ