গভীর রাতে ছিন্নমূল শীতার্তদের মধ্যে উষ্ণতা বিলাচ্ছেন ডিসি

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চল জুড়েই তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন মানুষ। বিশেষ করে রাজশাহীতে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় কনকনে হাড় কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। এসময় অসহায় ছিন্নমূল মানুষ যাতে শীতে কষ্ট না করে সেজন্য মধ্যরাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, বস্তি ও রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল শীতার্তদের গরমের উষ্ণতা দিতে কম্বল নিয়ে হাজির হন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
পরে তিনি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে গভীর রাতে শুয়ে থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ ও অসহায় ছিন্নমূল মানুষের শরীরে কম্বল জড়িয়ে দেন। এছাড়াও ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলায় ৬৪ হাজার ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জেলার সকল উপজেলায় এসব কম্বল বিতরণ করেন।
গভীর রাতে অপ্রত্যাশিতভাবে জেলা প্রশাসককে কাছে কম্বল পেয়ে অনেক ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষ তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরেন। এ সময় জেলা প্রশাসক তাদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের গায়ে গরমের উষ্ণতা দিতে কম্বল জড়িয়ে দেন।
কম্বল পেয়ে ৭২ বছর বয়সী অন্ধ বৃদ্ধা ভিক্ষুক তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রচন্ড শীতের ঠ্যালায় খুব কষ্টে আছিনু। তাও একটা কম্বলও কেউ দেয়নি। শ্যাষ রাতে আইজ ডিসি স্যারের হাতত থ্যাকে একটা কম্বল পাইয়্যাছি। এটাতেই হামার শীত চলি যাবে।’
নগরীর শিরোইল কলোনী বস্তির শরিফা বেগম বলেন, ‘কুনো মতে ছোট্ট একটা বেড়ার ঘরে থাকি। পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়। হামার চেয়ে অসহায় মানুষ এই বস্তিতে আর কেউ নেই। কয়দিন থেকে হাড় কাঁপানো শীতে খুব কষ্টে আছিনু। কিন্তু আজ ডিসি স্যারের একটা কম্বল পাইছি। এখন আর শীতের রাতে ঘুমাতে কষ্ট হবে না।’
কনকনে ঠাণ্ডায় ষ্টেশনের রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা ভিক্ষুক আজিম আলী কম্বল পেয়ে খুশি হয়ে বলেন, হামি দিনে ভিক্ষা করি আর রাতে ষ্টেশনের এই রাস্তায় পাশে ঘুমায়। টাকার অভাবে কম্বল কিনতে পারিনি। তাই কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে খুব কষ্টে আছিলাম। ডিসি স্যারের কম্বল পেয়ে হামার অনেক উপকার হলো।
মধ্য রাতে কম্বল বিতরণ করার সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. শামসুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশিক জামান, মো. মাহফুজুর রহমান, সাজিদ তানভী শোভন, অয়ন ফারহান শামস প্রমুখ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, ‘রাজশাহীতে হঠাৎ করেই ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত জেঁকে বসেছে। এই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে গরমের উষ্ণতা দিতে মধ্য রাতে ঘুরে ঘুরে খেটে খাওয়া দিন মজুর ও ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই রাজশাহী জেলায় প্রায় ৬৪ হাজার শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এসব শীতার্ত অসহায় মানুষ যাতে শীতে কষ্ট না করে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী জানান, এ বছর রাজশাহী জেলায় ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারিভাবে জেলার ৯টি উপজেলায় শীতার্তদের মাঝে ৬৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও গত কয়েকদিন ধরে রাতে জেলা প্রশাসক নিজেই তার গাড়ি বহরে কম্বল নিয়ে রেল ষ্টেশন, বস্তিবাসী ও রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪ | সময়: ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ