যার বদৌলতে নেতা, তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর চারঘাট-বাঘার সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে নির্বাচনী আচরণ বিধি নিয়ে অভিযোগ করেছেন বাঘার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ। এসব বিষয় নিয়ে এখন এলাকায় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় লোকজন বলছেন, যার বদৌলতে মেরাজ আজ অঢেল সম্পদের মালিক এবং নেতা হলেন, এখন তাঁর বিরুদ্ধেই নোংরামি শুরু করেছেন তিনি।
বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী সহ এলাকার লোকজন বলেন, এই মেরাজের এক সময় কিছুই ছিল না। রাজনীতি করার সুবাদে এখন তিনি কোটি-কোটি টাকার মালিক। তাকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বানাতে সহায়তা করেছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তারপরে আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বাঘার চকরাজাপুর, আলাইপুর ও কিশোরপুর পদ্মা এলাকায় একটানা ১০ বছর বালি মহলের ইজারা পেয়ে শুরু করেন রাজ্য বিস্তার। সেই সুবাদে তিনি কোটি-কোটি টাকার মালিক বনে যান। এবার সেই মেরাজই বিতর্কিত আক্কাছ আলীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত চারঘাট উপজেলার বাসিন্দা ও দুইবার নৌকার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া সহ এবার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া রায়হানুল হকের সাথে প্রচরণায় নেমেছেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ১৯৯৬ সালে বাঘার বহুল আলোচিত ঘটনা বিবস্ত্র মামলার আসামী এবং দলীয় পদ হারানো বর্তমান মেয়র আ’লীগ নেতা আক্কাস আলীর সাথে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দুরুত্ব থাকায় গত কয়েক বছর আগেও বাঘা উচ্চ বিদালয় মাঠে অনুষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে মেরাজুল ইসলাম মেরাজ তার মামা আক্কাছ আলীকে কুলাঙ্গার বলে গাল-মন্দ করেছিলেন। অথচ বর্তমানে দলীয় পদপদবী, জনপ্রতিনিধিত্ব, প্রভাব এবং অর্থ প্রতিপত্তি সবকিছু বাগিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এখন মামার হাত ধরে মাঠে নেমেছেন।
তবে এ বিষয়টি অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রতি নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ-কেউ বলছেন, যার অবস্থান যতটুকু-তাকে ততটুকু সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখা উচিত ছিল। কিন্তু পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাথে মেয়র আক্কাছ আলীর দুরুত্ব হওয়ার কারণে তিনি তার ভাগনে মেরাজুল ইসলাম মেরাজকে বুকে টেনে অনেক স্নেহ ভালোবাসা দিয়েছেন। অথচ সেই মেরাজ এখন হাঁটছেন উল্টো পথে।
বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এক বিঘা জমি থেকে গত কয়েক বছরে বিস্ময়কর সম্পদের মালিক বনে যাওয়া বাঘার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ এখন আর কাউকে গুনতে চায় না। তিনি এবং তার মামা একত্রিত হয়ে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত (স্বতন্ত্র) প্রার্থী রায়হানুল হক রায়হানের পক্ষে প্রচাণায় নেমেছেন। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলুর লোকজন।
এদিকে আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলী, বাঘা উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সদস্য মাসুদ রানা তিলু ও বাঘা পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু জানান, মেরাজুল ইসলাম বর্তমান সরকার আমলের প্রথম ১০ বছর একক ভাবে বালু ব্যাবসা করে প্রচুর টাকার মালিক বনেছেন। এই বালু উঠাতে গিয়ে যেখানে তার ইজারা নেয়া আছে, সেখানে না তুলে অন্যস্থানে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা তাকে দুই দফা ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছিলেন। এর আগে নদী থেকে অন্যেরে জমির উপর দিয়ে জোর পূর্বক পাইপ বসিয়ে বালি উত্তোলন করতে গেলে জনগণের তোপের মুখে পড়েন মেরাজ। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিন গিয়ে সেই বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন।
বাঘা থানা পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থানায় মেরাজুল ইসলাম ও তার খালু নওশাদ আলীর বিরুদ্ধে আদম ব্যবসার নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন এক ব্যক্তি (মামলা নম্বর ৪১৭/১৬)। এ মামলায় মেরাজ জামিন পেলেও তার খালু আদালতে আড়কে পড়েন। পরে এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে, জেলা ছাত্রলীগের পদ ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রক্ষার্থে তিনি ও তার খালু মামলাটি আপোশ করে নেন।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ ২০২২ বেলা ১১ টার সময় বাঘার শাহদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন চলা অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাস আলী সভাপতি হতে না পারার অবস্থান বুঝতে পেরে দলের জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে সভামঞ্চ এবং দর্শক গ্যালারী লক্ষ করে লাটি-সোটা নিয়ে চেয়ার ভাংচুর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের মধ্যে আক্কাস আলীর ভাগনে পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামের ভূমিকা ছিল ব্যাপক উগ্রবাদী। এ ঘটনায় প্রায় ৩০ জন দলীয় নেতা-কর্মী আহত হন।
পরে সভাস্থলে উপস্থিত একই দলীয় কর্মী-সমর্থকরা আক্কাস বাহিনীকে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর পুনরায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ.এইচ.এম খাইরুজ্জামান লিটন বলেন, এতোদিন শুনে আসছি আক্কাছ আলী একজন সন্ত্রাসী। তবে আজ নিজ চোখে দেখলাম। অনুরুপ বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন।
এ বিষয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। সেই মামলার দুই নম্বর আসামী ও আক্কাস আলীর সেকেন্ড ইন কমান্ড মেরাজুল ইসলামকে ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আটক করে রাজশাহী জেলা পুলিশ। পরে তিনি জামিন পান। বর্তমানে এ মামলাটি চলমান রয়েছে। আর এসব রাগে মামা-ভাগনে এক হয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন বলে লোকজন মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও রায়হানুল হক রায়হানের সমর্থনকারী মেরাজুল ইসলাম মেরাজকে মোবাইল করা হলে তিনি তার ফোন রিসিভ করেননি।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৩ | সময়: ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ