কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন হামলার নেপথ্যে সহকারি প্রধান শিক্ষক!

রাসেল সরকার, কেশরহাট: কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন হামলার নেপথ্যে নেতৃত্ব প্রদানকারি হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষক সহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর উন্মোচিত হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে এলাকাবাসীর ব্যানারে মহাসড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে বহিরাগতরা। বিক্ষোভ শেষে তারা বিদ্যালয় চত্বরে আন্দোলন শুরু করলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করিয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক সহিদুজ্জামান প্রধান শিক্ষকের স্থলাভিসিক্ত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলী চক্রান্ত চালিয়ে আসছেন। এদিন বিক্ষোভকারিরা বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলাকালীন মিছিল নিয়ে বিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করার চেষ্টাকালে বহিরাগত দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে।
এ সংঘর্ষে বিক্ষোভকারিদের পক্ষে ইন্ধন যোগান সহকারি প্রধান শিক্ষক সহিদুজ্জামান। বিক্ষোভকারিদের নেতৃত্ব দেন কাজি হাবিবুর রহমান মিঠু ও স্কুল মার্কেটের ফিড ব্যবসায়ি আব্দুল মালেক বাবুল। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন মহসিন আলী।
আরো জানা গেছে, স্কুল চলাকালিন এবং অধিকাংশ সময় সহকারি প্রধান শিক্ষক বিক্ষোভকারি বাবুলের দোকানে উঠাবসা করে আড্ডা জমান এবং সেখানে বসেই তার ইটভাটা ব্যবসা পরিচালনা করেন। পাশাপাশি ঘটনার সময়ও তিনি স্কুলে উপস্থিত থাকলে বিক্ষোভকারীদের থামানোয় কোন ভূমিকা পালন করেননি তিনি। এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, তার ইন্ধনেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ইতোপুর্বে সহকারি প্রধান শিক্ষক সহদিুজ্জামান এধরণের একাধিক ঘটনায় প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ ইন্ধন যুগিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিনের সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে পুনরায় চক্রান্তের জাল বুনেন তিনি। তারই মদদে আজিজ নামের কথিত অবিভাবক সদস্যকে দিয়ে আদালতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করান।
এছাড়াও সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি যোগসাজসে উল্টো প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। তার এধরণের হীন মানষিকতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি নানা ধরণের জটিলতায় পড়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অভ্যন্তরিণ দেন দরবারে মতক্যৈর কারণে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী প্রামাণিকের অপ্রকাশিত নির্দেশে আন্দোলনকারিরা আন্দোলন করেন এবং প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেন। একটি ভিডিতে দেখা যায় তিনি আন্দোলনকারিকে উস্কানিমুলক পেটে গুতো দিয়ে চলে যান।
অপর ভিডিওতে দেখা যায় তার ডাকেই মহসিন গ্রুপের লোকজন এসেই আন্দোলনকারি কাজি মিঠুকে পিটিয়ে যখন করেন। এসময় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি উস্কানিমূলক ভূমিকা পালন করেন। এদিন সব ঘটনা তার উপস্থিতিতেই চলছিল।
এবিয়য়ে বিক্ষোভকারি কাজি হাবিবুর রহমান মিঠু বলেন, সেই দিনের ঘটনায় সহকারি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে। কারণ আমি গেটে তালা দিয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমে যায়। কিন্তু এর কয়েক মিনিটের মাথায় সহকারী প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি তালা খুলে দিয়ে হামলাকারীদের ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়। এরপর তারা আমার উপর হামলা করে।
এসব বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক সহিদুজ্জামান বলেন, আমি ইন্ধন দেয়নি। আমি বাবুলের ফিডের দোকানে ওঠাবসা করি তার ব্যবসায়িক পরামর্শ দেয়ার জন্য। তাকে সব সময় বিশৃংখলায় না জড়িয়ে ভাল ভাবে ব্যবসা পরিচালনার পরামর্শ দেই। ঘটনার দিন যে বিক্ষোভকারিরা স্কুলে ঢুকে যাবে তা আমার জানা ছিল না। এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী বলেন, প্রধান শিক্ষক এবং দুটি পক্ষ। পরে জড়িয়ে পড়ে মহসিন। আসলে প্রধান শিক্ষক ও মিঠুর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সংঘাত। আমি ছেলে মেয়েদের সামলাতে ব্যস্ত ছিলাম। কে কাকে মারধর করেছে তা বুঝে উঠেনি। যা জেনেছি তা ভিডিও ও সংবাদ মাধ্যমে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এদিন সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং সভপতি উপস্থিতিতেই এসব কিছু ঘটেছে। উনারা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তমুলক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং কাজ করা হচ্ছে। সেখানে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমার এবং সহকারি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির স্বাক্ষরেই টাকা উত্তোলনসহ ব্যয় করা হয়েছে। আমাকে অপসারণ করে আমার জায়গায় অন্য কাউকে বসানোরর মিথ্যা ষড়যন্ত্র চলছে। বিদ্যালয়ের সকল অর্থের আয় ব্যয়ের সঠিক তথ্য প্রমাণ রয়েছে। মিথ্যা অপপ্রচার চালানোর কিছুই নাই। যদি তদন্ত আসে সবকিছুর সঠিক প্রমান উপস্থাপন করা হবে।
এছাড়াও কারণ দর্শানোর নোটিশ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, তারা আমার অনুপস্থিতেই কমিটির মিটিং করে নীতিমালা বহির্ভুত ভাবে আমাকে নোটিশ প্রদান করেছেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা নীতিমালা লংঘন করা হয়েছে। এজন্য আমি নোটিশ গ্রহণ করিনি।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ