আদালত চত্বরে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করে যাওয়ার সময় কয়েকটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর রেলগেট এলাকায় এই বোমা হামলায় আহত হয়েছেন দুইজন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে অবস্থানরত পুলিশের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় আদালতের জেনারেটর রুমের জানালার কাচ ভেঙে যায়।
রেলগেটে বোমা বিস্ফোরণে আহতরা হলেন, নগরীর হেতেমখা এলাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আব্দুল জলিল (৫৫) ও অটোরিকশা যাত্রী মেহেরপুর জেলার আবুল বাশার (৩৮)।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক শংকর কুমার দে, বোমাটি আব্দুল জলিলের শরিরের উপর বিস্ফোরিত হয়। এতে তার শরে প্রচুর পরিমান স্প্রীন্টার লাগে। এছাড়াও আবুল বাশারের বাম চোখে কয়েকটি স্প্রীন্টার লেগেছে। ওই ছোখে বড় ধরণের ক্ষত হয়েছে। তিনি ওই ছোখের দৃষ্টি হারাতে পারেন।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে বিএনপির ব্যানারে অবরোধের সমর্থনে ২০ থেকে ২৫ জন যুবকের একটি দল মিছিল বের করে। মিছিলের ব্যানারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়াও মাঝে বিএনপি নেতা নাসির হোসেন অস্থির এর ছবি ছিল। মিছিলটি কিছু দূর গিয়েই শেষ হয়। এর পর তারা হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে রেলগেট হয়ে চলে যায়। এ সময় একটি বোমা অটোরিকশায় গিয়ে পড়ে। এতে আহত হন চালক আব্দুল জলিল ও যাত্রী আবুল বাশার। বোমার আঘাতে অটোরিকশার সামনের গ্লাস ভেঙে যায়।
ওসি বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পুলিশ যায় এবং ওই এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ রেলগেট এলাকা থেকে তিনজনকে আটক করে। এর আগে মিছিলের প্রস্তুতির সময় অলোকার মোড় এলাকা থেকে আরও তিনজনকে আটক
এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে অবস্থানরত পুলিশের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় আদালতের জেনারেটর রুমের জানালার কাচ ভেঙে যায়।
হাত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আদালত চত্বরে অবস্থানরত মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাশে রিটানিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাড়ানো হয় পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে হাত বোমা ছঁড়া হয়। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গাড়িতে না পড়ে পাশে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্য আহত না হলেও তারা কানে কম শুনছেন বলে জানিয়েছেন। ঘটনার পর সেখান থেকে পুলিশের গাড়িটি সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পর বিস্ফোরণের জায়গাটি ইট দিয়ে ঘিরে দিয়েছে পুলিশ তদন্ত করে। সেখান থেকে হাত বোমার খোসা ও স্প্রীন্টার উদ্ধার করা হয়।
রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক বলেন, আদালতের সীমানা প্রাচীরের বাইরে থেকে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমাটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ঘটনার সময় তার কার্যালয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছিলেন। এ সময় আমরা বিকট শব্দ শুনি। পরে জানলাম বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ পর পুরো আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে আইনশৃংখলা বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহীতে বিএনপির মিছিল থেকে ককটেল হামলায় আহত হয়ে আবুল বাশার ও মো. আব্দুল জলিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবর পেয়ে বুধবার বিকেল ৪টায় রামেক হাসপাতালে তাদের দেখতে যান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন এর এক প্রতিনিধি দল। এ সময় তাদের শারিরীক অবস্থা, চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর ও তাদের যাবতীয় সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জিয়া আজাদ হিমেল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ কুমার মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান।
উল্লেখ, মহানগরীর গৌরহাঙ্গা এলাকায় অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় মিছিলের মধ্য থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পরপর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় দুজন আহত হন।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২৩ | সময়: ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ