অনুমোদন নেই, নাশকতায় ব্যবহারের শঙ্কা বড়াইগ্রামে মুদি দোকান, চায়ের স্টলে মিলছে পেট্রোল অকটেন

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: নাটোরের বড়াইগ্রামে যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি হচ্ছে। বিক্রির বৈধ অনুমোদন না থাকলেও চা স্টল থেকে শুরু করে মুদিখানা, ফ্ল্যাক্সিলোড, স্যানিটারি ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব দাহ্য পদার্থ। এতে চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে এভাবে দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুযোগ নিতে পারে দুর্বৃত্তরা, এমন আশঙ্কা অনেকের।
উপজেলার লক্ষ্মীকোল, মৌখাড়া, জোনাইল, আহম্মেদপুর, চান্দাই, রাজাপুর ও ধানাইদহ বাজারসহ ছোট-বড় বাজার ছাড়াও মহাসড়কের ধারে এমন দেড় শতাধিক দোকানে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল ও অকটেন। কোনোটিতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। কোমল পানীয়র বোতলে বিক্রি করায় আশপাশের মানুষের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
হাতের নাগালে পেট্রোল বিক্রি করায় সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতে পারে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, দুর্বৃত্তরা যাতে এসব ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
তবে একাধিক দাহ্য পদার্থ বিক্রেতার দাবি, মোটরসাইকেল চালকদের চাহিদার কারণে ব্যবসার পাশাপাশি পেট্রোল-অকটেন বিক্রি করছি। এ ব্যাপারে অনুমোদন লাগে এমনটা কেউ কখনও বলেনি।
নিয়ম অনুযায়ী, অনুমোদন ছাড়া প্রকাশ্যে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া জ্বালানি তেল, পেট্রোল ও অকটেন বিক্রির জন্য পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপন সক্ষমতা-সংক্রান্ত লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্সও নিতে হয়।
কিন্তু এসব কিছুই না মেনে গ্রামগঞ্জের বাজারেও পানীয়ের প্লাস্টিক বোতলে তেল বিক্রি করছেন দোকানিরা। শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এ ব্যবসা করা হচ্ছে। নেই আগুন নেভানোর যন্ত্রও। দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিকার কী, তাও জানেন না।
জানা গেছে, উপজেলায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল এবং নাটোর-পাবনা মহাসড়কের ধারে ৯টি ফিলিং স্টেশন আছে। এসব ফিলিং স্টেশন থেকে তেল কেনেন খুচরা বিক্রেতারা। তারা লিটারে কিছু ১০-১৫ টাকা বেশি নিয়ে মোটরসাইকেল চালকদের কাছে বিক্রি করেন।
মৌখাড়া এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান সুমন বলেন, বাসার পাশে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করায় সব সময় আতঙ্কে থাকি। গত দুইবছরে এ দোকানে দুইবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে মেসার্স আল আমিন ফিলিং স্টেশনের মালিক আব্দুস সাত্তার বলেন, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স সহ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন থেকে তেল বিক্রি ও উত্তোলনের অনুমতি লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে বিএসটিআইর পরিমাপ পদ্ধতিতে তেল বিক্রি করতে হয়। খোলা বোতল বা ঢোপে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু অনেকেই ডিপো থেকে অবৈধভাবে পেট্রোল-অকটেন কিনে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
বনপাড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আকরামুল হাসান তুষার বলেন, বিধি অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল ও অকটেন বিক্রির জন্য কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে প্রথমে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিতে হয়। এরপর তারা বিস্ফোরক লাইসেন্স পান। যারা খোলাবাজারে বিক্রি করেন তাদের কোন লাইসেন্স নেই। পেট্রোল পাম্পেরও দাহ্য পদার্থ বিক্রি করতে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স লাগে। খোলাবাজারে এসব বিক্রি ঝুঁকিপূর্ণ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাসেল বলেন, যথাযথ অনুমোদন ছাড়া পেট্রোল-অকটেন সহ দাহ্য পদার্থ বিক্রি করার সুযোগ নেই। যারা অনুমোদনহীন ভাবে দোকানে বা রাস্তার পাশে দাহ্য পদার্থ বিক্রি করছেন, তাদের ব্যাপারে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৩ | সময়: ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ