সর্বশেষ সংবাদ :

 ইউএনও ও ওসির হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক হচ্ছে পুরুষ শূন্য গ্রাম 

মোহনপুর প্রতিনিধি

মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের তেঘর মাড়িয়া গ্রামে আধিপত্যকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকেই আটক হয়েছিলেন। আর গণ গ্রেফতারের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান অভিযুক্তরাসহ গ্রামবাসী। মারামারির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও সকলের মাঝেই গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছিল। তালাবদ্ধ ছিল মসজিদ। বন্ধ ছিল মসজিদের আজান ও নামাজ। স্থানীয়দের মতে মোহনপুর থানার ওসির হস্তক্ষেপে সবকিছু দ্রুত স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার ছোট একটি গ্রাম তেঘর মাড়িয়া। এ গ্রামে সামান্য ৮০টি পরিবারের মানুষের বসবাস। অথচ ছোট এ গ্রামটিতে বসবাসকারি মানুষদের খেটে খাওয়া জীবন যাপনের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে মারামারি, দ্বন্দ, বিবাদ বিরাজমান ছিল। স্থানীয়দের মতে একটি গভীর নলকূপের দখদারিত্বকে ঘিরে আবু বক্কর এবং মনসুর গ্রুপের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারা নিজেদের আধিপত্যকে টেকাতে ইতোপূর্বে একাধিকবার সংঘাত দ্বন্দ্বে জড়াতো।

 

 

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ সেপ্টেম্বর আবুবক্কর ও মনসুর গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় আবু বক্করসহ কয়েক জন গুরুরুতর ভাবে আহত হন। অজ্ঞান অবস্থায় আবু বক্করকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এঘটনায় আবু বক্করের পক্ষে থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়েরের পর পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রাখে। এরই মাঝে গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে গ্রামের একটি বাড়ির জমি মাপজোকের সময় আবু বক্কর এবং মনসুর গ্রুপের লোকজন রক্তক্ষয়ী মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় গ্রুপের ৭/৮ জন গুরুতর আহত হন।

 

 

খবর পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে ৮/১০ জনকে আটক করে থানায় নেয়। এসময় মারামারির সঙ্গে জড়িত না থাকা ও নারী শিশু ছাড়া সাধারণ মানুষও গ্রামছাড়া হন। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে তেঘর মাড়িয়া গ্রামটি। এ মহূর্তে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে মারামারির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পেয়ে আটক কৃতদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনার দুদিন পর পুরুষশূণ্য গ্রামটি অনেকটায় স্বাভাবিক হ”েছ বলে জানাই গ্রামের একাধিক মানুষ।

 

২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় একাধিক গ্রামবাসীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে নমীর উদ্দিনের ছেলে আবদুল হামিদ বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বরের মারামারির পর সবাই পালিয়ে যান। পরে যখন জানাজানি হইছে তখন যারা মারামারির সাথে ছিলনা তাদের ওসি স্যার ছেড়ে দিয়েছেন। তার পর যারা মারামারি করেনি তারা বাড়ি ফিরে আসতে শুরু করে। এখন অনেকটায় জীবন যাপন স্বাভাবিক হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারছে। তিনি দ্রুত এঘটনার নিরসন চান।

 

 

খোদা বক্সের স্ত্রী সাহেরা বিবি বলেন মাঝে মধ্যে পুলিশ আসছে বলেই গ্রাম এখন শান্ত আছে বাবা। পালাই যাওয়া মানুষগুলা বাড়িতে আসুক। আর যেন মারামারি না হয় এমন আশা করেন তিনি।

 

গ্রামের উত্তপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আকবর আলী বলেন, দুইদিন মসজিদে মুছল্লি ছিলনা। এখন আজান হচ্ছে মুছল্লিরাও নামাজ পড়ছেন। সাধারণ মানুষদের পুলিশ কিছু বলেননি তাই পরিস্থিতি তিটা দ্রুত স্বাভাবিক হওচ্ছ। আর যেন এধরণের দ্বন্দ্ব, ফ্যাসাদ, মারামারি না হয় এজন্য তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।

 

 

মন্তব্য জানতে মনসুর গ্রুপের কাউকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে আহত বাক্কারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি জানান, হত্যার উদ্দেশ্যেই আমার উপর অতর্কিত হামলা চাালিয়ে দুই হাত এবং দুই পা ভেঙ্গে দিয়েছে। গলার কাছে গভীর ভাবে গর্ত হয়ে গেছে। আমাকে উদ্ধার করতে আসা আমার কয়েকজন নিরীহ মানুষসহ একজন ভ্যানচালককেও মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়েছে। আমি এখন পঙ্গু। প্রশ্রাব পায়খানা হাসপাতাল বেডে শুয়েই করতে হচ্ছে। থানায় মামলা হয়েছে। আমি এঘটনার আইনানুগ সঠিক এবং সুষ্ঠ বিচার চাই।

 

মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রামে পর পর দুই দিন মারামারির ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। আহতরা হাসপাতালে রয়েছেন। গ্রামটিতে হয়রানীমুলক কোনো অভিযান চালানো হয়নি। গ্রামের শান্তি রক্ষার্থে জনপ্রতিনিধের দাবির মুখে ইউএনও মহোদ্বয় বিষয়টি মিংমাসার চেষ্টা করছেন।

সানশাইন / শাহ্জাদা মিলন


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২ | সময়: ১০:৪৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর