সর্বশেষ সংবাদ :

আবারও পিছিয়েছে মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন

সানশাইন ডেস্ক: সহসাই হচ্ছে না দেশের নির্বাচিত ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের কাজ। মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে দক্ষ জনবল তৈরির সুযোগ এবং উন্নত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নেওয়া সরকারের এই কার্যক্রম বারবার নানা কারণে পেছানো হচ্ছে। এর ফলে ২০১৭ সালে নেওয়া এ সংক্রান্ত তিন বছরের প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৩ সালেও আলোর মুখ দেখেনি। নতুন করে এ সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও তথ্যপ্রযুক্তিমুখী করার লক্ষ্যে শিখন-শিখানো প্রক্রিয়ায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের প্রবর্তন ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করার জন্য উদ্দীপনা পদ্ধতির উদ্ভাবনের উদ্যোগ গ্রহণ করে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরকে। এ লক্ষ্যে সারা দেশ থেকে ৬৫৩টি মাদ্রাসা বাছাই করা হয়। কিন্তু এরপর আজ আর বেশি এগোয়নি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের কয়েকটি খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ছাড়ে অর্থ বিভাগের নির্দেশনা প্রতিপালন করতে ব্যর্থ হওয়া, প্রকল্পের ভেতরে নতুন কিছু কাজ সংযোজন করা, আবার কিছু কাজ বাদ দেওয়া, আবার কিছু কাজের ব্যয় বেড়ে যাওয়া, আবার কিছু কাজের ব্যয় কমে যাওয়া- এমন সব কারণে কয়েকবার প্রকল্পটিতে চারবার সংশোধনী আনে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। এসব সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় ও বাস্তবায়নের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব আনা হয়। সর্বশেষ চলতি ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে “দেশের ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পটি চতুর্থবারের মতো সংশোধনীসহ অনুমোদন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রকল্পটি গ্রহণের পর ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২০ সালের জুনে। এই মেয়াদেও ব্যর্থ হয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। এরপরেও প্রকল্পটিতে ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কয়েকবার সংশোধনী প্রস্তাব এনে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করে। প্রতিবারই ব্যর্থ হয় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। সর্বশেষ আগামী ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে একনেকে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন করা হয়েছে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও তথ্যপ্রযুক্তিমুখী করার লক্ষ্যে শিখন-শিখানো প্রক্রিয়ায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের প্রবর্তন ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করার জন্য উদ্দীপনা পদ্ধতির উদ্ভাবনই ছিল এই প্রকল্পটি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের বাছাই করা ৬৫৩টি মাদ্রাসায় ১ হাজার ৪৬টি কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক (মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম হার্ডওয়্যার) ক্রয় এবং ৩২২টি গবেষণাগার সরঞ্জামাদি (মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এক্সসরিজ) ক্রয় করা হবে।
কমিশন জানিয়েছে, “দেশের ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পটি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপিতে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটি সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
সূত্র জানিয়েছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (জুলাই ২০২০- জুন ২০২৫) বলা হয়েছে, দেশের মাদ্রাসাগুলোতে কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস, আইসিটিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রোগ্রামিং কোর্স চালু করাসহ নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও দক্ষতা উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে দক্ষ জনবল তৈরির সুযোগ এবং উন্নত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি হবে বিধায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সংগতিপূর্ণ।
একনেকে অনুমোদন চেয়ে প্রকল্পটির পক্ষে পরিকল্পনা কমিশন তাদের মতামতে বলেছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষা দান প্রক্রিয়ায় মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা প্রদান করা হবে। এর ফলে বাংলাদেশের মূলস্রোতের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে যথাযথ আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বর্তমানে কতিপয় নতুন অঙ্গের অন্তর্ভুক্তি, কতিপয় অঙ্গ বাদ দেওয়া, কতিপয় অঙ্গের প্রাক্কলিত ব্যয়ের হ্রাস-বৃদ্ধি এবং মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধিসহ প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধন প্রয়োজন হয়েছে। এমন অবস্থায়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “দেশের ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন (প্রস্তাবিত তৃতীয় সংশোধনী)” শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে ব্যয় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার (৩.৯৬ শতাংশ বাড়িয়ে) মোট ৩৬ কোটি ১৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০১৭ হতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদনের সুপারিশ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, সরকার বাংলাদেশের মূলস্রোতের শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে যথাযথ আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তুলতে চায়। এ জন্যই “দেশের ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। আশা করছি সম্প্রতি নেওয়া নতুন মেয়াদেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৩ | সময়: ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ