অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে

সানশাইন ডেস্ক: আইনজীবী ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৩ সালে যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলাগুলো চলমান, সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে।
শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আইনজীবীদের মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত নবনির্মিত ১৫ তলা বার কাউন্সিলের ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, এই বিএনপি আমাদের কত নেতাকর্মী হত্যা করেছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাড়গুঁড়া করে হত্যা করেছে। এরপর আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তারা সৃষ্টি করলো। ২০১৩ সালে অগ্নিসন্ত্রাস- যারা এই অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, ২৯ জন পুলিশ হত্যা করেছে, তিন হাজার ২২৫ জন মানুষ পুড়িয়েছে, ৫০০ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এই অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত, জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলাগুলো চলমান, সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের কাছে, সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, এদেরকে যদি সাজা না দেওয়া যায়, কারণ এরা এত অন্যায় করেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই তো সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, তাহলে তাদের শাস্তি হবে না কেন? তাদের শাস্তি এত দেরিতে হবে কেন? তাদের এই বিচার কাজ কেন দ্রুত হবে না? সে ব্যাপারে আপনাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। কারণ, ওই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে।’
অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন আন্দোলনের সুযোগ, আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। আমরা তো পারিনি, তারা তো আমাদের বাধা দিয়েছে। কিন্তু আমরা বাধা দিচ্ছি না। একে একে সবাই সামনে আসছে। কাজেই এই সব অপরাধী, তাদের মামলাগুলো শুধু চালালেই হবে না, তারা যাতে যথাযথ সাজা পায়, সেই ব্যবস্থাটাও আপনাদের করতে হবে। এটা হলো আপনাদের কাছে আমার দাবি। কারণ, বিচারহীনতা, এটা যেন না চলে। ন্যায়বিচার যেন মানুষ পায়। স্বজনহারা বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা- এটা কী কষ্টের, আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমরা তা বুঝি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনের নামে বিএনপি মাঠে নামতে চায়, জামায়াতসহ আরও অনেকেই। তারা আন্দোলন করুক, আমাদের কোনও ব্যাপারে কথা নাই। কিন্তু তারা যদি আবার কোনোরকম অগ্নিসন্ত্রাস, ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি কোনও ধরনের দুর্বৃত্তপরায়ণ কাজ করে, তাহলে আমরা ছেড়ে দেবো না। এটাও বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, কারণ এই বাংলাদেশ ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬, এরপর ২০০১ থেকে ২০০৮-এই ২৯টা বছর এ দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হয় নাই। যারা ক্ষমতায় ছিল নিজের ভাগ্য গড়তে ব্যস্ত ছিল, দেশের মানুষের জন্য না। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। আমি যার জন্য বলেছি- ধর্ম যার যার উৎসব সবার। কাজিই এ ক্ষেত্রেও কেউ কারও ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তাতে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, দেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকুক, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক। আমাদের মতো যেন ৩৫ বছর না লাগে বিচার পাওয়ার (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার)। সেই জন্য দ্রুত বিচার যাতে সম্পন্ন হয়, সেই আহ্বান করছি।’ আইনজীবীদেরকে মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে অন্যায় দেখবেন, অবশ্যই সেই অন্যায়কারীরা যেন যথাযথ সাজা পায়, তার জন্য আপনারা শুধু প্রাকটিস করলে হবে না, মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক বড় বড় আইনজীবী, নামকরা- এক সময় আমাদের সঙ্গেও ছিল। আমি দেখেছি, ২০০৭ সালে যখন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়…আমিতো বিরোধী দলে ছিলাম, সবার আগে আমাকেই গ্রেফতার করা হয়।’ সেই সময় আদালতে পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তৎকালীন সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছিল বলে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘প্রতিদিন কোর্টে এনে যন্ত্রণা দিতো। কিন্তু আমি কখনও মাথা নোয়াইনি। আমার ভয়-ভীতি ছিল না। কারণ, আমি জানি, আমি কোও অন্যায় করিনি। মিথ্যাভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারপরেও আইনজীবীরা, উচ্চ আদালতে প্রাকটিস করেন, তারাও গেছেন আমার পাশে দাঁড়াতে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’ মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ