দুস্থদের নামে সরকারি অনুদানের টাকা যাচ্ছে বিকাশ হ্যাকারদের পকেটে !

নুরুজ্জামান,বাঘা : দেশের প্রান্তিক মানুষকে বিভিন্ন ভাবে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এসব সহায়তার টাকা কেউ পাচ্ছেন ব্যাংকের মাধ্যমে, আবার কেউ পাচ্ছেন বিকাশ খোলার মাধ্যমে মোবাইল নাম্বরে। এ দিক থেকে যারা বিকাশের মাধ্যমে (অর্থ)সহায়তা নিচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকের ভাগ্যে নেমে আসছে বিপর্যয়। কতিপয় হ্যাকার তাদের একাউন্ট ক্লোন করে সরকারি অনুদানের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমনটি অভিযোগ মিলেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতি তিনমাস অন্তর দেশের সকল উপজেলায় অস্বচ্ছল বয়স্ক নারী ও পুরুষদের জন্য এক হাজার পাঁচ শত টাকা হারে বয়স্ক ভাতা প্রদান করছেন। এদিক থেকে বাঘায় সাড়ে ছয় হাজার মানুষ এ সুবিধা পাচ্ছেন। একই ভাবে সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিধবা নারী । অনুরুপ ভাবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এর মাধ্যমে প্রতিমাসে আট’শ টাকা হারে পাচ্ছেন মাতৃত্বকালিন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা ।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ভাবে তৃণমূল পর্যায়ে এ সকল সুবিধা ভোগিদের টাকা অনেক সময় চলে যাচ্ছে বিকাশ হ্যাকারদের পকেটে। আর এ নিয়ে অভিযোগ করেও কোন সমাধান হচ্ছে না। অনেকের মতে, সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলায় ইদানিং নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে বিকাশ থেকে টাকা উধাও হওয়ার ঘটন। কতিপয় হ্যাকার ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে প্রবাসী-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের “ইমো”ব্যবহারকারীদের ইমো হ্যাক এবং পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিচিতজনদের নিকট হতে প্রতারণা পূর্বক মোবাইল ফিন্যান্সিং সার্ভিস (বিকাশ) এর মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ সব ঘটনায় বিত্তশালী থেকে শুরু করে গরীব-দীন মজুর কেউ ছাড় পাচ্ছে না প্রতারক চক্রের হাত থেকে। অথচ, এ বিষয়ে উদাসীন সংশ্লিষ্ট কোম্পানী এবং মোবাইল ব্যাংকিং কর্তৃপক্ষ।

বাঘা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো: নাফিজ শরিফ জানান, সম্প্রতি উপজেলার দিঘা গ্রামের বয়স্ক ভাতা উপকার ভোগি শামসুল ইসলাম এবং গড়গড়ি ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদ সহ 5-6 জন বিধবা ভাতা উপকার ভোগির টাকা হ্যাক করা হয়েছে।

বাঘার দু’জন বিকাশ এজেন্ট বলেন, প্রায় কয়েকদিন পর পরই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা হারানোর কথা অনেকের কাছেই শুনতে পায় । ইদানিং বিকাশ এ্যাপ থেকে টাকা গায়েবের ঘটনা ছাড়াও লোভনীয় অফার, বৃত্তির টাকা, ট্রানজেশনে ফি কম কাটবে, লটারি পাওয়া, বিকাশের সমস্যা দেখিয়ে পিন চাওয়া, সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পিন বা টোকেন গেছে ইত্যাদি বলে বিকাশ পিন হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা ইত্যাদির ফাঁদে পড়ে অনেকেই টাকা খোয়াচ্ছেন।

এ বিষয়ে সুশীল সমাজের লোকজন জানান, উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে এমন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি থেকে পুলিশের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে মোবাইল ট্রাক করে বা আইপি এ্যাড্রেস ডিটেকশনের মাধ্যমে চোর ধরার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন টা করা হয় না। কোম্পানি ও পুলিশ প্রশাসন উভয়ই গা ছাড়া ভাব দেখাই। যার কারণে ছাড় পেয়ে আরো উৎসাহিত হচ্ছে হ্যাকার বা ডিজিটাল চোরেরা। আর এসব সমস্যায় প্রতিনিয়তই আর্থিক ভাবে খতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ জনগনকে।

এ বিষয়ে বাঘা এন.আর.বি ব্যাংকের ম্যানেজার শ্রী-সঞ্জয় কুমার বলেন,মোবাইল ব্যাংকিং ও হ্যাকিং এর বিষয়ে টাকা উঠানোর সময় যদি কোনো ওটিপি বা ভেরিফিকেশন কোড ব্যবহার করা যায় তাহলে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। যেখানে লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা সেখানে এসব বিষয়গুলো থাকা অতি জরুরী। তা না হলে এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটবে, যা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ব্যবসা উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।


প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২২ | সময়: ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সানশাইন