বড়াইগ্রামে ১৩ দিনে ১০ জনের আত্মহত্যা

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: ১০ সেপ্টেম্বর রোববার আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। আত্মহত্যা প্রতিরোধে দেশে বিভিন্ন সংস্থা সচেতনতামুলক প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু নাটোরের বড়াইগ্রামে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধুমাত্র গত ৫ থেকে ১৮ আগষ্ট পর্যন্ত ১৩ দিনের মধ্যে দুই স্কুল শিক্ষার্থীসহ আত্মহত্যা করেছে ১০জন।
নানা কারণে এ উপজেলায় প্রতি বছর কমপক্ষে শতাধিক নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেন বলে থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। প্রতিনিয়ত এসব অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনায় একদিকে যেমন শিশু সন্তানরা অভিভাবক শুন্য হয়ে বিপাকে পড়ছে, তেমনি সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে পথে বসছে অনেক পরিবার।
কিন্তু উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান হতাশাগ্রস্থ এসব মানুষদের সচেতন করাসহ আত্মহত্যা বিরোধী মানসিকতা সৃষ্টিতে ভূমিকা না রাখায় আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে বলে দাবি সচেতন মহলের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খেলার সময় ভাইয়ের প্রতি অভিমান, বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাবার কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়া, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা, সন্তানকে শাসন করাকে কেন্দ্র করে ঝগড়া, জমি কিনে রেজিস্ট্রি না হওয়ার হতাশা, স্বামী ভরণপোষণ না দেয়া ও কবিরাজী চিকিৎসা নিতে না দেয়াসহ বিচিত্র কারণে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। গলায় ফাঁস নেয়া ও কীটনাশক সেবনসহ নানা ভাবে এসব আত্নহত্যা করছেন তারা।
গত ১৮ আগস্ট উপজেলার গোপালপুর উত্তরপাড়ায় স্ত্রীর প্রতি অভিমানে মিলন হোসেন (২৬) নামে এক যুবক বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ঘরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্নহত্যা করেন। দুদিন পর পঁচা দুর্গন্ধ বের হলে স্বজনরা তার লাশ উদ্ধার করেন। ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার জোয়াড়ী ইউনিয়নের আরাজী ভবানীপুর গ্রামের আজিরুল ইসলামের মেয়ে স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন (১১) ছোট ভাইয়ের (৭) সঙ্গে খেলা নিয়ে ঝগড়ার পর অভিমানে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে কাটাশকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এর আগের দিন ১৪ আগস্ট সোমবার জোয়াড়ী গ্রামে শিশু সন্তানকে শাসন করায় স্বামী রিপন সরকারের বকুনী সহ্য করতে না পেরে সুমনা সরকার (২১) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস নিয়ে আত্নহত্যা করেন।
১৩ আগস্ট পারিবারিক কলহের জের ধরে মাঝগাঁও গ্রামে সেলিনা পারভীন ও বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামে রোখসানা খাতুন নামে আরো দুই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন। ১১ আগষ্ট শুক্রবার উপলশহর গ্রামে একই দিনে দুই নারী-পুরুষ গলায় ফাঁস নিয়ে ও বিষাক্ত ট্যাবলেট সেবনে আত্মহত্যা করেন।
তাদের মধ্যে ভরণপোষণ না দেয়ায় আব্দুস সালামের প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন (৩৫) এবং জমি কিনেও রেজিস্ট্রি করতে না পারার হতাশা থেকে নবীর উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৫০) আত্মহত্যা করেন। অজ্ঞাত কারণে গর্ভপাত কবিরাজি চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়ায় ৫ আগস্ট শনিবার রাতে কেচোয়াকোড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী মনিরা খাতুন (২০) বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
এ ব্যাপারে বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আকরামুল হক বলেন, প্রথমত হতাশা থেকেই মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। নানা কারণে মানুষ ধৈর্যহীন হয়ে পড়ছে। জীবনের নানা পাওয়া না পাওয়া থেকে তারা আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নিচ্ছে। কিন্তু সরকারি বেসরকারি কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এসব হতাশাগ্রস্থ মানুষদের নিয়ে কাউন্সেলিং না করায় এ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাবিবা খাতুন বলেন, নারীরা একদিকে যেমন কোমল হৃদয়ের অধিকারী, তেমনি একটু বেশি অভিমানী। তারা অনেক তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এছাড়া ইদানিং শিশুরাও আত্মহত্যা করছে। এদেরকে সচেতন করতে পাঠ্য বইয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতামুলক গল্প-প্রবন্ধ যুক্ত করতে হবে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সিদ্দিক জানান, আত্মহত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া কোন উপায় নেই। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সমাজের শিক্ষিত শ্রেণির পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ