হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আরেকটি খুন করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর অভিযোগ!

পাবনা প্রতিনিধি:
নিজের সন্তানকে হারিয়েই এমনিতেই দিশেহারা। এরপর আবার সন্তান হত্যার আসামিরা তাদের নিজের পিতাকে হত্যা করে মিথ্যা লুটপাটের অভিযোগ দিয়ে তাদের নামে মামলা দেয়ায় হয়রানির মুখে পড়েছেন আক্তার হোসেন ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা। পুলিশি তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসলেও হয়রানি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তারা।
এছাড়াও হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা মামলার হয়রানি ও হুমকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রাণভয় ও নানা আশঙ্কার মধ্যে বাস করছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার আলিয়ারপুরের আক্তার হোসেন ও তার ভাই মামলার বাদী আব্দুর রশিদ।

 

 

 

 

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহরের দৈনিক কলম সৈনিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য তুলে ধরেন ভুক্তোভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, জমিজমা বিরোধের জের ধরে মাঠে চাষ করার সময় ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ দলবদ্ধ হয়ে আক্তার হোসেন ও আব্দুর রশিদের পরিবারের ওপর হামলা করে একই এলাকার মৃত নেছার আলীর ছেলে দবির, খলিলুর, বাবলু ও শাহাদত এবং তার লোকজন। এসময় আক্তার হোসেনের ছেলে সুজনসহ বেশ কয়েক জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আক্তার হোসেনের ছেলে সুজন। এঘটনায় চাচা আব্দুর রশিদ বাদী হয়ে দবির, খলিলুর, বাবলু ও শাহাদতসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তারা আরও অভিযোগ করেন, সুজন হত্যা মামলা চলাকালীন ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর পাশেই তারাশ থানার এলাকার খোলাবাড়িয়ার কালভার্ট এলাকায় সুজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শফিকুল ইসলামের বাবা ইয়াছিন আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় সুজন হত্যা মামলার বাদী আব্দুল রশিদ, নিহত সুজনের বাবা আক্তার হোসেনসহ ১১ নাম উল্লেখ্য করে মামলা দায়ের করেন শফিকুল ইসলাম। এতে স্বাক্ষী করা হয় সুজন হত্যা মামলার আসামিদের। ফলে পুলিশের সন্দেহ হলে শফিকুলের চাচাতো ভাই শাহাদৎ এবং ফরিদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে নিজের চাচাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তারা। এরপর পুলিশ আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে তাতে নারাজি দেন বাদী শফিকুল ইসলাম। বর্তমানে মামলাটি পিবিআইয়ে তদন্তাধীন রয়েছে। আর লুটপাট , ভাঙ্চুর ও মিথ্যা মামলায় আক্তার হোসেনদের খালাস দেন আদালত। আক্তার হোসেন ও আব্দুর রশিদের খালাস দেয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন শফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন।

 

 

 

 

 

 

 

তারা বলেন, এখনও তারা হুমকি দেয় আমাদের ছেলের হত্যা মামলা তুলে নিতে। এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারি না। লুটপাট ও ভাংচুরের মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পেয়েছি। আর ইয়াছিনকে যে তার ছেলে-ভাতিজারাই হত্যা করেছে সেটি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। এরপরই তারা আমাদের ছেলে সুজন হত্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। আমরা নিড়িহ মানুষ। সব সময় আতঙ্কে থাকি। আমরা চাই এই হয়রানিমূলক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, পুলিশ মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিলে মামলার বাদি নারাজি দেন। এর প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিক তদন্তের জন্য পিবিআই কে নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। সঠিক তদন্তের স্বার্থে মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাচ্ছেনা। তবে মামলায় কাহুকে হয়রানি করা হচ্ছেনা। সঠিক তদন্তে এ ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ত পাওয়া যাবে পিবিআই তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবে। তবে অপরাধ না করলে তাদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুজনের বাবা আক্তার হোসেন, সুজনের চাচা মামলার বাদী আব্দুর রশিদ ও চাচাতো ভাই আবদুল আলিম প্রমুখ।

 

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine