বাঘা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দলিল লেখকদের দৌরাত্ব !

নুরুজ্জামান বাঘা : রাজশাহীর বাঘায় বর্তমান বাজার মুল্যে এক বিঘা জমির দাম প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। এ জমিটি যিনি ক্রয় করেন, সেই ব্যাক্তিকে সরকারি হিসাবের বাইরে কেবল উপজেলা দলিল লেখক সমিতির জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়, লাখে পাঁচ হাজার টাকা হারে ১২ লাখে মোট ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারকে দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। অবশিষ্ট টাকার ভাগপান দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক-সহ ১৬৭ জন দলিল লেখক এবং কতিপয় রাজনৈতিক নেতা। এই অর্থ ভাড়া-ভাগির ফলে একদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হন ক্রেতা-অপর দিকে রাজস্ব বঞ্চিত হন সরকার।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ঘুষ আদায়ের কিছু নিয়ম বানানো হয়েছে। যেমন ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জমির মূল্যে দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ দিতে হবে সাব-রেজিস্ট্রারকে। যার ব্যত্বয় ঘটেনি বাঘা উপজেলা সব-রেজিস্ট্রার অফিসে। এখানে একটি স্বল্প মুল্যের দলিল সম্পাদন করতে সব-রেজিস্ট্রার কে দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। আর কোটি টাকার দলিলে সাব-রেজিষ্ট্রারকে দিতে হয় প্রায় ১ লক্ষ টাকা। এ কারনে দলিল লেখরা সমিতির নামে ইচ্ছে মত অর্থ আদায় করতে পারছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মোহা: নকিবুল আলম দলিল প্রতি কমিশন আদায়ের কথা সম্পুর্ণ অস্বীকার করেন । অপন দিকে ঐ অফিসের অফিস সহকারী (পেশকার) মুসলিমা খাতুন জানান, এখানে সরকারের নির্ধারিত ফির বাইরে কোন অর্থ নেয়া হয়না। তবে দলিল লেখকরা যদি সমিতির নামে কোন অর্থ বানিজ্য করে থাকে সেটি আমাদের জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে সুশীল সমাজের লোকজন দলিল লেখকদের দ্বারা অর্থ বানির্জ করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,কর্তব্যরত সাব-রেজিষ্ট্রার দলিল লেখকদের প্রতি একটু নজরদারি করলে, দলিল লেখক সমিতির দৌরাত্ব কমে এবং অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ হয়রানী থেকে মুক্তি পাই। কিন্তু রহস্য জনক কারনে তিনি সেটি করেন না ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাঘা দলিল লেখক সমিতি নামে ১৬৭ জন ব্যাক্তি সমিতি খুলে জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে সরকারি খরচের বাইরে অতিরিক্ত (ফি) অর্থ আদায় করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, যারা জমি-রেজিস্ট্রির কিছুই বুঝেন না এমন কতিপয় সুবিধা ভোগী ব্যাক্তিও দলিল লেখকের লাইসেন্স তৈরী করে সমিতির অর্ন্তরভুক্ত হয়ে এই অবৈধ টাকার ভাগ গুনছেন। এদিক থেকে অনেক সময় জমি ক্রেতারা সমিতির ভয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে জমির মূল্য কম দেখাচ্ছেন। এর ফলে রাজস্ব হারাচ্ছেন সরকার। আর লাভবান হচ্ছে দলিল লেখক সমিতি।

এদিকে বাঘা উপজেলার বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ তুফান এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, গত সোমবার তাঁর ভ্যাগনা মতিউর রহমান ৫১ শতক জমি ক্রয় করেছেন প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান এর নিকট থেকে। এ জমিটি রেজিষ্টি করতে নির্ধারিত ক্রয় মূল্যের চেয়ে তাকে সমিতির নামে গুনতে হয়েছে ৫২ হাজার টাকা। একই অবস্থা অন্যান্য জমি ক্রেতাদের । তিনি সমিতির এই অনৈতিক কর্মকান্ডকে পুকুর চুরি বলে মন্তব করেন এবং এ বিষয়ে প্রতিকারের দাবি জানান।

এ বিষয়ে বর্তমান দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হেসেন মিল্টন বলেন, এখানে সপ্তায় দু’দিন অফিস চলে। একদিনে সর্বচ্চ আয় হয় চার থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। আমরা এই মুহুর্তে সম্পুর্ণ টাকার ভাগ দলিল লেখকদের দিচ্ছিনা। কারণ সামনে দুই ঈদ রয়েছে। সেই ঈদে বোনাস দেয়ার জন্য রেখে দিচ্ছি।


প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৩ | সময়: ২:৩২ অপরাহ্ণ | সানশাইন