সর্বশেষ সংবাদ :

সাঈদীর মৃত্যু: চিকিৎসককে প্রাণনাশের হুমকি, থানায় জিডি

সানশাইন ডেস্ক: যুদ্ধাপরাধের দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন একজন চিকিৎসক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান মঙ্গলবার রাতে ধানমন্ডি থানায় গিয়ে এই জিডি করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাঈদী কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ১৩ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ অগাস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে মৃত্যু হয় সাঈদীর। তার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলে ছিলেন এস এম মোস্তফা জামান। জিডিতে তিনি বলেছেন, ‘কতিপয় ব্যক্তি’ সামাজিক মাধ্যম এবং ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ করছে। মেসেঞ্জারে বিভিন্ন গ্রুপে এবং ফেইসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে ‘ভয়-ভীতি’ দেখাচ্ছে এবং ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দিচ্ছে। তাতে তিনি ‘ভীত, শঙ্কিত’।
ফেইসবুক ও ইউটিউব ব্যবহারকারীদের কয়েকটি লিংক জিডিতে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেছেন, “তারা এবং তাদের অনুসারী ব্যক্তিরা যে কোনো সময় আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের খুন, জখমসহ বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।” থানায় জিডি করার পর অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে যে রোগীই আসুক, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষ তারা সবাইকে সমান চিকিৎসা দেন। চিকিৎসা পেশার যে মূল আদর্শ, সেটাকে সমুন্নত রেখেই সেবা করেন।
“এখানেও (সাঈদীর ক্ষেত্রে) সেইমত কাজ করা হয়েছে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। এবং আমরা রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েছি, কোনো ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসার যেরকম প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে, সেরকম হয়নি।” ডা. মোস্তফা জামান বলছেন, মঙ্গলবার সারাদিন তাকে উদ্দেশ্য করে ‘মিথ্যা গুজব’ ছড়ানো হয়েছে, তাকে ‘হত্যাকারী’ বলা হয়েছে, যা ‘সত্য নয়’।
“অনেকে জীবননাশের, প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে জিডি করতে এসেছি।ৃ আমি গত ২৬ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আশা করছি, যারা এসব প্রপাগান্ডা করছেন, তারা ভুল বুঝবেন।” ধানমন্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, “আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।”
একাত্তরে ‘দেইল্লা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত সাঈদী পরে ইসলাম ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিতি কুড়ান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জামায়াতের মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের তখনকার নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে ২০১৪ সালে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। ওই তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই নিহত হন অন্তত ৭০ জন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।


প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর