সর্বশেষ সংবাদ :

কলেজে সাংবাদিক-শিক্ষার্থী নির্যাতন : রাজশাহীতে ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মী বহিষ্কার

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসে গড়া টর্চার সেলে সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার রাতে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাম মুবিন সবুজ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলেন, নগর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক শাহরুখ আলম, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক কাওসার আজম রাফি, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রাজু আহম্মেদ ও রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী ওয়ালিউর রহমান রিফাত। তারা সবাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী। এদের প্রত্যেককে মহানগর শাখার সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে আগামী ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, আমরা যারা ছাত্রলীগ করি সাধারণ ছাত্রদের ভালোর জন্যই করি। তাদের পড়াশোনা এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করাই আমাদের কাজ। ছাত্রলীগের প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও এমন দিকনির্দেশনাই ছিল। যারা ছাত্রলীগ করে সাধারণ ছাত্রদের আঘাত করবে বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে তারা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থার মধ্যে পড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি জোর করে দলীয় প্রোগ্রামে নিতে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) দুই শিক্ষানবিশ রিপোর্টার শরিফুল ইসলাম ও সাকিবসহ অন্তত ৩০ সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলাকারী শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান, আহসানসহ সবাই রাশিক দত্তের অনুসারী বলে জানা যায়।
এ ঘটনার পরদিন রাজশাহী কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) ও রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তকে। এ সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত সুপারিশ করতে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি রাশিক।
অভিযোগ ওঠে, কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মিছিল-মিটিংসহ দলীয় কর্মসূচিতে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। যেতে না চাইলে মারধরসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্যাতন করা হয় টর্চার সেলে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসুস্থ থাকলেও ছাড় পান না শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রয়েছে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মা-বাবা তুলে গালিগালাজসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হন প্রতিনিয়তই।
এ ঘটনায় সাংবাদিকদের নিয়ে ছাত্রাবাস পরিদর্শনে গিয়ে ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়েন কলেজ অধ্যক্ষ। এক পর্যায়ে কলেজ অধ্যক্ষ, ছাত্রাবাসের সুপারসহ সাংবাদিকদেরও প্রকাশ্যে হুমকি দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
তবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সামনে কলেজ অধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক এবং ছাত্রাবাস সুপার ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিক। পরে কলেজ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের ডাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রুমে ফিরে যায়।
এছাড়া সম্প্রতি কলেজ হোস্টেলের কক্ষে মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল হলে আলোচনায় আসেন রাশিক দত্ত। এছাড়া প্রোগ্রামে না যাওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ও হোস্টেলে একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন বলে রাশিক ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।


প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৩ | সময়: ৬:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ