অসচেতনায় বাড়ছে থ্যালাসেমিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে উপস্থিত ৮ বছরের শিশু রুমেল। বাবা-মার সঙ্গে এসেছেন রক্ত নেয়ার জন্য। প্রতি মাসে একবার শরীরে রক্ত নিতে হয়। রুমেল থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। প্রতিদিনই রাজশাহীর সরকারি-বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রুমেলের মতো অনেকেই ভিড় করে শরীরে রক্ত নিতে। দিনে দিনে বাড়ছে এ রোগির সংখ্যা। শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবেই এ রোগের উর্ধ্বগতি। মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ালেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সঙ্গে জন্ম নেয়া শিশুরাও পেতে পারে নিরাপদ ভবিষ্যৎ।
চিকিৎসকরা জানান, বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না জানা জরুরি। কোনোভাবেই দুজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক যেন বিয়ে না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি দেখা যায়, স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক তাহলে গর্ভাবস্থায় ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রুণের পরীক্ষা করাতে হবে।
রুমেলের বাবা আকরাম হোসেন বলেন, চোখের সামনে ছেলেকে ধুকে ধুকে শেষ হতে দেখে ভালোলাগে না। এ রোগ থেকে তার ছেলে মুক্তি পাবে না। এ সচেতনতার অভাবেই হয়েছে। বিয়ের সময় যদি রক্ত পরিক্ষা করে বিয়ে করা হয় তাহলে ছেলেটা আমার এ রোগে আক্রান্ত হতো না।
আকরাম হোসেন আরো জানান, আমার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী। প্রতি মাসে তার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াতে হয়। প্রতি মাসে রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়।
এদিকে, সম্প্রতি বংশগত রক্তের রোগ থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার বন্ধে নীতিমালা তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সাত সদস্যের ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে। আর কমিটিকে খসড়া নীতিমালা তৈরি করে ছয় মাসের মধ্যে তা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুবুল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।
থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট।
দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি অর্থাৎ এক কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়া বাহক বা রোগি। এছাড়া প্রতি বছর আরও ৭ হাজারের বেশি শিশু ত্রুটিপূর্ণ জিনসহ জন্মগ্রহণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানের ১০ শতাংশ বাহককে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী ৫০ বছরে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে, যা দেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে।
২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগির শুধু রক্ত সঞ্চালনের জন্যই তার পরিবারকে বছরে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা খরচ করতে হয়।
এ রোগের আরেক ধরনের চিকিৎসা হল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দেশে এখন পর্যন্ত কেবল দুজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানান, শুধু সচেতন হলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোগটি কিন্তু ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগির দেহের রক্ত যদি অন্যের শরীরে দেয়া হয়, তাহলেও ওই ব্যক্তির থ্যালাসেমিয়া হবে না।


প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৩ | সময়: ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ