দ. আফ্রিকাকে আবার হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের যুবাদের

স্পোর্টস ডেস্ক: অফ স্টাম্পের বল আলতো টোকায় পিচের ওপর রেখেই রানের জন্য ছুটলেন মাহফুজুর রহমান। অপর প্রান্তে পৌঁছেই মাতলেন বাঁধনহারা উল্লাসে। তার উচ্ছ্বাসের কারণও আছে যথেষ্ট৷ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে পরপর দুই ম্যাচেই যে জয়সূচক রান করলেন তিনি। সিরিজ জিতল বাংলাদেশের যুবারা।
রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে সোমবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৩ উইকেটে। পঞ্চম যুব ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ২১০ রানে বেঁধে রেখে ১৭ বল বাকি থাকতেই তা ছুঁয়ে ফেলে স্বাগতিকরা।
প্রথম চার ম্যাচে দুটি করে জেতে দুই দল। অলিখিত ফাইনালে পরিণত হওয়া শেষ ম্যাচে সম্মিলিত পারফরম্যান্সের সৌজন্যে সিরিজের ট্রফি নিজেদের ঘরেই রাখল বাংলাদেশ। শেষ দুই ম্যাচ জিতে প্রত্যাবর্তনের দারুণ গল্পই লিখল তারা।
তৃতীয় ম্যাচের পর নিয়মিত অধিনায়ক আহরার আমিনের অসুস্থতা বড় ধাক্কা হয়ে আসে দলের জন্য। শেষ দুই ম্যাচে নেতৃত্ব পেয়ে তার অভাব তেমন বুঝতে দেননি মাহফুজুর। দুই ম্যাচেই ব্যাটে-বলে দারুণ অবদান বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডারের। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বল হাতে ৩ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে ১৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন মাহফুজুর৷ তবে ৭৬ বলে ৬৮ রানের ইনিংসে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আরিফুল ইসলাম। এছা ড়া পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন আদিল বিন সিদ্দিক।
টস জিতে বোলিং নেয় বাংলাদেশ। ২০ রানের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনারকে ফেরান রিজান হোসেন। ছন্দে থাকা গিলবার্ট প্রিটোরিয়াস (৮), থিবি গ্যাজাইডে (৫) এ দিন কিছু করতে পারেননি। দলের স্কোর পঞ্চাশ ছোঁয়ার আগে ফেরেন ওয়ারেন ফন জাইলও। চতুর্থ উইকেট জুটিতে চাপ সামাল দেন ডেভিড টিজার ও রিচার্ড সেলেৎসোয়ান। ৫২ রানের জুটিতে একশ পেরোয় সফরকারীরা।
২৭ রান করা সেলেৎসোয়ানকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন আরিফুল। এরপর জুয়ান জেমসকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন টিজার। সিরিজে নিজের দ্বিতীয় পঞ্চাশ করেন তিনি ৬৭ বলে। টিজারকে আর বেশি দূর যেতে দেননি রোহানাত দৌল্লাহ বর্ষণ। বাউন্সারে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন টিজার। ৩ চারে ৮৯ বলে ৬৩ রান করে ফেরেন তিনি।
পরের ওভারে ৩২ রান করা জেমসকে ফেরান বাংলাদেশের আগের ম্যাচের নায়ক রাফিউজ্জামান রাফি। এরপর আর কেউই তেমন টিকতে পারেননি। শেষ দিকে লিয়াম অ্যাল্ডারের ৮ বলে ২০ রানের ইনিংসে দুইশ পেরোয় দক্ষিণ আফ্রিকা। লেজ মুড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন মাহফুজুর। এ ছাড়া বর্ষণ, রিজান, রাফি ধরেন ২টি করে শিকার।
রান তাড়ায় ইতিবাচক শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার আদিল ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুজনের ৪০ রানের জুটি আসে ৪০ বলে। যেখানে সিংহভাগ কৃতিত্ব অবশ্য আদিলেরই। রিজওয়ান ২১ বলে ১৩ রান করে ফিরলে ভাঙে জুটি। এরপর টিকতে পারেননি রিজানও। দ্রুত ২ উইকেট হারালেও দলের ওপর চাপ আসতে দেননি আদিল ও আরিফুল। তৃতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৮৭ রানের জুটি। ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন আদিল। গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি করা আরিফুলের পঞ্চাশ ছুঁতে লাগে স্রেফ ৪৪ বল।
আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে ভাঙে এই জুটি। জেমসের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল পুল করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন আদিল। বল উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে যেতেই আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। যা বিশ্বাস হচ্ছিল না আদিলের। মাঠ ছাড়ার আগে লম্বা সময় ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। আদিল ফিরলেও দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন আরিফুল। কিন্তু অপরপ্রান্তে সঙ্গ দিতে পারেননি নাঈম আহমেদ, শিহাব জেমস, আশরাফুর জামানরা।
পরে আরিফুলও বড় শটের চেষ্টায় ক্যাচ আউট হলে দুইশর আগেই ৭ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে রাফির সঙ্গে ২২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে নিরাপদেই জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মাহফুজুর।


প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ