সর্বশেষ সংবাদ :

রাণীনগরে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান আমন শুন্য, দুমাসে বোরোর সংগ্রহ ১১ শতাংশ

রাণীনগর প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে চলতি বোরো মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তরের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে গত দুই মাসে লক্ষমাত্রার মাত্র ১১ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়েছে। এছাড়া চাল সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। গত আমন মৌসুমে চালে লক্ষমাত্রা প্রায় অর্জিত হলেও ধান এক ছটাকও সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে এবারও ধান সংগ্রহে সম্ভাব্য লক্ষ মাত্রা পূরণ ভেস্তে যেতে বসেছে। সরকার নির্ধারিত দরের চাইতে স্থানীয় বাজারে দর বেশি থাকায় ধান সংগ্রহ অভিযানের এমন পরিস্থিতি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
রাণীনগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ৩০টাকা কেজি দরে ধান ক্রয়ের জন্য রাণীনগর উপজেলায় এক হাজার ৬০৩ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ৪৪টাকা কেজি দরে তিন হাজার ৭৩ মেট্রিকটন চাল ক্রয়ের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
গত ১৭ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন করা হয়। কার্যালয় সুত্র জানায়, ৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৭৭ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ হয়েছে। তবে স্থানীয় বাজারে ধানের দর বেশি থাকায় লক্ষমাত্রা অর্জনে তেমন সম্ভবনা নেই।
এছাড়া চাল সরবরাহে উপজেলার ৩৮জন মিলারের মধ্যে ৩৩জন মিলার চুক্তিবদ্ধ হয়ে এপর্যন্ত এক হাজার ৩০০ মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করেছেন। তারা বলছেন, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হয়তো চালে লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে।
এছাড়া যে ৫ জন মিলার চুক্তিতে আসেনি তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। কার্যালয়ের দেয়া তথ্যমতে,গত আমন মৌসুমে ২৮টাকা কেজি দরে একহাজার ১৪৩ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সে সময় এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে চালে ৮৫৩ মেট্রিটনের মধ্যে ৮১৭ মেট্রিকটন সংগ্রহ হয়েছিল।
ধানের মোকাম খ্যাত আবাদপুকুর হাটে বুধবার ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক, জাহিদুল ইসলাম, শফির উদ্দীন, মোসারফ হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, বাজারে জিরাশাইল ধান এক হাজার ৩৫০টাকা, কাটারী ভোগ এক হাজার ২৫০টাকা এবং ব্রি ধান ৯০-এক হাজার ৩২০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি করেছি। সরকার যে দরে ধান ক্রয় করছেন, তা থেকে বাজারে কিছু টাকা বেশি পাচ্ছি।
এছাড়া সরকারের কাছে ধান বিক্রি করলে ধানের মান, আর্দ্রতা, ব্যাংক একাউন্টসহ নানান ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই বাজারেই ধান বিক্রি করছি। কৃষকরা বলেন, আমাদের এলাকা চিকন ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। আমরা মোটা ধান খুব কম উৎপাদন করে থাকি। কিন্তু সরকার শুধু মোটা ধানের একদর নির্ধারণ করেছে, চিকন ধানের আলাদা কোন দর নির্ধারণ করেনি। ফলে মোটা ধানের দরে চিকন ধান গুদামে বিক্রি করলে আমাদের লোকসান হবে। তাই আগামী মৌসুমে মোটা এবং চিকন ধানের আলাদা দর নির্ধারণ করার দাবি জানাচ্ছি।
রাণীনগর উপজেলা চালকল মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিতানাথ ঘোষ বলেন, বর্তমানে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহে প্রতি কেজিতে এক টাকা করে লোকসান হচ্ছে। আমাদের এলাকায় মোটা ধান তেমন উৎপাদন হয়না।
ফলে চিকন ধানের চাল করে সরবরাহ করতে হচ্ছে। এছাড়া অন্য এলাকা থেকে মোটা ধান কিনে আনতে খরচ বেশি পরে যাচ্ছে। তাই ব্যবসার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করতে লোকসান কাঁধে নিয়েও চাল সরবরাহ করছি।
রাণীনগর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন বলেন, সরকারী দরের চাইতে স্থানীয় বাজাওে দও বেশি পাওয়ায় কৃষকরা গুদামে ধান দিচ্ছে না। গত আমন মৌসুমে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। এই মৌসুমে এপর্যন্ত ১১ শতাংশ ধান সগ্রহ করা হয়েছে। তবে আর বেশি ধান সংগ্রহ হওয়ার সম্ভবা তেমন নেই। এছাড়া চুক্তিবদ্ধ মিল মালিকরা চাল সরবরাহ শুরু করেছেন। আসা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চালে লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে।


প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ