এলাকায় চরম উত্তেজনা, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গ্রেপ্তার ৭ : গোদাগাড়ীতে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষে তিনজন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নের ইয়াজপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, গোদাগাড়ীর বড়গাছি গ্রামের নাইমুল ইসলাম (৮০), তাঁর ভাই মেহের আলী (৭০) এবং রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভাটাপাড়া এলাকার সোহেল রানা (৪৫)। ঘটনায় জখম অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। এসময় স্বজনদের ক্ষোভ ও আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে নাইমুল, মেহের ও সোহেলকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত তিনজনই একপক্ষের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
রাজশাহী জেলা পুলিশ বলছে, সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ইউনুস (২২), মো. আমু (২২), মো. রায়হান (৩৫), মো. মনিরুল (৪৫), মো. সোলেমান (৫০) ও রজব (৩১) বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তাদের শরীরে রক্তাক্ত জখম ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
গোদাগাড়ীর পাকড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আসের আলী জানান, সংঘর্ষের পর আহতদের সবাইকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসক।
তিনি জানান, জমি নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধের জের ধরে রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও জানান, এই সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তিনজন নিহতের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টার দিকে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষই দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র, লাঠি, ফলা ও বল্লম নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর ঝামিয়ে পড়ে।

ওসি বলেন, ইয়াজপুর গ্রামের বিলে সোহেল রানা ছোটনের ১৪ বিঘা জমি রয়েছে। মেহের আলী ও নাইমুল দুই ভাই জমিগুলো বর্গায় নিয়ে চাষাবাদ করে আসছিলেন। তবে ওই জমিগুলো বেশ কিছুদিন থেকে নিজের দাবি করে আসছে পাকড়ি গ্রামের আশিক আলী চাঁন। সকালে চাঁন তার দল-বল নিয়ে ওই জমি দখল করে হালচাষ করতে যায়। এ সময় জমির বর্গাচাষিরা তাদের বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে তা রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেই।
নিহত মেহের আলী ও নাইমুল আলীর ছোট ভাই আনসুর রহমান বলেন, আশিক আলী চাঁন জমিগুলো নিজের দাবি করে আসছিল। তিনি বিএমডিএতে চাকরি করেন। তিনি জমি দখল করার জন্য সোমবার পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটে হিসেবে লোকজনকে নিয়ে হামলা চালায়। স্থানীয় চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনও এসময় সেখানে এক পক্ষের হয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ভাড়াটে সন্ত্রাসীরায় এই হামলায়। তারা তিনজনকে ঘটনাস্থলে পিটিয়ে হত্যা করে। যারা উদ্ধার করতে যায় তাদেরও তারা পিটিয়ে জখম করে।
কাঁকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আসের আলী জানান, এ ঘটনায় এখনো থানা ও তদন্ত কেন্দ্রে কোনো মামলা হয় নি। তবে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জড়িত থাকলে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে। তিনি বলেন, ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ পরবর্তি অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে।
এদিকে নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য রামেক হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে। ময়না তদন্তের পর লাশ নিজ নিজ পরিবারের কাছে বিধিমোতাবেক হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মামলা : এ ঘটনায় নিহত সোহেল রানা ছোটনের ভাই মো: হৃদয় (৩৩) বাদি হয়ে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে আসামী করা হয়েছে ৭১ জনকে। বাকি ৫০ জন অজ্ঞাত আসামী।
এ মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এরা হলেন, মো: ইউনুস আলী, মো: রজব আলী, মো: হায়দার আলী, মো: আতাউর রহমান, মো: মঞ্জুর রহমান, মো: ওমর ফারুক ও মো: আনারুল ইসলাম।


প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ