বিসিবিতে ২০ বছর চাকরি করে যেভাবে নেপাল জয় করছেন মামুন

স্পোর্টস ডেস্ক: সময়টা ছিল ২০০৩ সাল। ক্রিকেটে তখন জোয়ার। বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা হলে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। ওই সময়ে ক্রিকেটের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর অস্থায়ী গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)।
ধীরে ধীরে কিশোর হয়ে উঠেন তরুণ। তরুণ থেকে যুবক। বয়স ও কর্মদক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তার অভিজ্ঞতা। দেখতে দেখতে ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দ ও মাঠ-ঘাস-মাটির সঙ্গে প্রেমের রসায়নে কাটিয়ে দেন ২০ বছর। অভিজ্ঞতার ঝুলি টইটুম্বুর হলেও পদবী এখনও পাল্টায়নি, বিসিবির গ্রাউন্ডসম্যান। স্রেফ অস্থায়ী থেকে স্থায়ী হয়েছেন। তবে তার অর্জন ও প্রাপ্তির খাতায় যুক্ত হয়েছে নতুন এক দেশের নাম।
বিসিবির মামুন জয় করেছেন নেপাল। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের টুর্নামেন্ট আয়োজনে মাঠ প্রস্তুত করেছে নেপাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এসিসি প্রিমিয়ার কাপ টুর্নামেন্টের প্রধান কিউরেটর হিসেবে কাজ করছেন মামুন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নেপালে আছেন। সেখানকার প্রধান ভেন্যু মুলপানি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট, আউটফিল্ড আন্তর্জাতিক মানের করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। সঙ্গে নেপাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অনুরোধে বাড়তি কিছু দায়িত্বও তার কাঁধে যুক্ত হয়েছে।
খোলামেলা আলোচনায় মামুন ভাগাভাগি করলেন সব,‘আমি এই মুহূর্তে দুইটা মাঠ দেখছি। ওদের এনএসসির একটি মাঠ আছে, সেখানে অনুশীলন হয়। উইকেটগুলোও আমি নির্ধারণ করে দিয়েছি। তবে মূল মাঠ যেখানে খেলা চলছে, সেটাতে আমি দেখাশোনা বেশি করছি।’
মূল মাঠের কথা উঠতেই ঝাঁপি খুলে দেন মামুন, ‘মুলপানি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠটি মোটেও ভালো নয়। আমরা তিনজন (বিসিবির কিউরেটর শফিউল আলম বেলাল, বিসিবির সহযোগী কিউরেটর হুমায়ুন কবির) মিলে পরিকল্পনা করলাম কীভাবে কী করবো। কাজ শুরুর আগে মাঠটি ছিল পুরোপুরি অনুপযোগী। প্রায় দেড় মাস কষ্ট করার পর মাঠটাকে সবুজ করলাম। মাঠটা এখন অনেক সুন্দর। আগে এখানে ঘরোয়া যে লিগগুলোতে রানই উঠতো না। গড় রান ছিল দেড়শ’র মতো। ইতোমধ্যে কয়েকটি ম্যাচ হয়েছে, যেখানে রান হচ্ছে দুইশ’, আড়াইশ’র কাছাকাছি। ব্যাটসম্যানরা সেঞ্চুরি, হাফসেঞ্চুরিও পাচ্ছে।’
সঙ্গে নেপাল ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্পটাও করলেন মামুন, ‘গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আমরা তিনজন নেপাল আসি। বেলাল স্যার, হুমায়ুন কবির ভাই ও আমি হেড অব গ্রাউন্ডম্যান। বিসিবির মাধ্যমেই এসেছি। তারাই আমাদেরকে পাঠিয়েছে। শুরুতে স্থানীয় কিউরেটর ও গ্রাউন্ডসম্যানদের নিয়ে আয়োজন করা হয় একটি ট্রেনিং সেশনের। ট্রেনিং শেষ করে আমাদেরকে মুলপানি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমরা তিনজন মিলে স্টেডিয়ামকে খেলার উপযোগী করে তুলি।’
পরিবার ছেড়ে ঈদ করতে হচ্ছে মামুনের। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবেন নেপালে। বিসিবি দেশের বাইরে সুযোগ করে দেওয়ায় বেশ খুশি বাংলাদেশি এ কিউরেটর, ‘এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। দেশের বাইরে এসে এভাবে কাজ করছি। বিসিবিকে ধন্যবাদ তারা আমাকে এই সুযোগ করে দিয়েছে।’
সঙ্গে দেশেও স্থানীয় কিউরেটরের কাজের আরো সুযোগের দাবি জানিয়ে রাখলেন ৩৭ বছর বয়সী মামুন, ‘আমাদের অনেক গ্রাউন্ডসম্যান আছে যারা অনেক কিছু পারে। কিন্তু তাদের কাজের জায়গা দেখানোর সুযোগ করে দিতে হবে। যদি স্বাধীনতা দেওয়া হয় আমরাও ভালো কাজ করতে পারব।’


প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৩ | সময়: ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ