পবা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ : সম্মেলনে গঠিত কমিটি বদলে গেলো কেন্দ্রে

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পবা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত শনিবার। এই সম্মেলনের পর জেলা কমিটি যে কমিটি অনুমোদন দেয়, তা কেন্দ্রীয় কমিটিতে গিয়ে পরিবর্তন হয়ে গেছে। কেন্দ্রে সভাপতিকে ঠিক রাখলেও সাধারণ সম্পাদক পদের নেতার পরিবর্তন এনেছে। যাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, তিনি সেই দিন সম্মেলনে এ পদের প্রার্থীই ছিলেন না। এ নিয়ে পবার রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময়ে কেন্দ্র এ কমিটি দিয়েছে। গত ১০ জুন বিকালে পবার নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু, নির্বাহী সদস্য এ বি গালিব, জেলার সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা সহ পবা আওয়ামী লীগে ও সহযোগী সংগঠনের অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এই সম্মেলনের পর শাহিনুল ইসলাম শাহিনকে সভাপতি, আবদুল মতিন শিপলুকে সাধারণ সম্পাদক, তামীম হোসাইনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তরিকুল ইসলাম হিমেলকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। দলীয় প্যাডে এই কমিটি করে স্বাক্ষরও করেন জেলা সভাপতি ও সম্পাদক।
কিন্তু ঢাকায় গিয়ে সাধারণ সম্পাদকের জায়গায় নাম দেওয়া হয় কামরুল হাসান সাব্বির। এছাড়া এবার তামীম হোসাইনকে সহসভাপতি করা হয়। আর যুগ্ম সম্পাদক করা হয় সাবের জামাল পাভেলকে। সহসভাপতি পদে শিহাব শাহরিয়ার নামে আরেকজনের নাম যোগ করা হয়। এই প্যাডের নিচেও জেলা সভাপতি ও সম্পাদকের স্বাক্ষর রয়েছে। এই প্যাডেও সই দেখানো হয়েছে ১০ জুন। দুটি প্যাডই এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।
প্রথম কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন শিপলু বলেন, ‘সম্মেলনের পর সবাই পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নওহাটা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজের অফিসে বসেছিলাম। সেখানে আমাকে সাধারণ সম্পাদক আর শাহিনকে সভাপতি করে কমিটির অনুমোদন দেন জেলার সভাপতি ও সম্পাদক। প্যাডে কলম দিয়ে হাতে লিখে কমিটি দেওয়া হয়। তবে এটা কেন্দ্র থেকে ঘোষণা হবে বলে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা জানান। তখন স্থানীয় নেতারা এই প্যাডের ছবি তুলে রাখেন। কিন্তু তারএকদিন পর গত ১২ই জুন তারিখে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেল থেকে যে কমিটি প্রকাশ করা হয়, সেখানে দেখা যায় সম্পাদক হিসেবে আমি নেই, অন্যজন। এছাড়া সহসভাপতি পদে একজনকে ঢোকানো হয়েছে। আরেকটি পদে রদবদল হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একই সম্মেলনের পর দুটি কমিটি হতে পারে না। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করেছে। সংবাদ সম্মেলন করে আমি বিস্তারিত বলব।’
জানতে চাইলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা বলেন, ‘আমি একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। এসব বিষয়ে এখন কথা বলতে পারব না।’ সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টু বলেন, ‘পবায় যে কমিটি দেওয়া হয়েছিল, সেটা আমি দিয়েছি। এটাতে আমার স্বাক্ষর করেছি এবং এইটা বৈধ কমিটি। ঢাকা থেকে প্রকাশ হওয়া কমিটিতে আমার স্বাক্ষর নেই। এটা কেন্দ্র দিয়েছে। কেন্দ্র বলতে পারবে।’
তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের মতামত নিলে তারা বলেন, আমরা শুনেছি এবং জেনেছি আব্দুল মতিন শিপলু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে খুব একজন সাংগঠনিক ছেলে এবং দীর্ঘদিন ধরে সে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। আমরা তার এমন খবরে সত্যি খুব বিস্মিত ও হতাশ হয়েছি, এমন একটা সাংগঠনিক ছেলেকে যার নামে স্বাক্ষরিত কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র কিভাবে তাকে বাদ দিয়ে যে সম্মেলন প্রার্থী হয়নি তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কমিটি দিতে পারে।
তবে কেন্দ্র থেকে যে কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটিতেও জেলার সভাপতি রিন্টুর ও সাধারণ সম্পাদক রানা’র উভয়েরই স্বাক্ষর আছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘কাজ করলেই ভুল হয়। পবার কমিটিতেও একটু ভুল হয়েছে। সেটা নিয়েই কাজ করছি। শিগগিরই সেটা ঠিক করে দেওয়া হবে।’


প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ | সময়: ৫:২২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ