শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়তে জমিজমার বিরোধের জেরে ছোট ভাইয়ের বউকে বড়ভাই ও তার বউ স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মারপিটসহ স্বর্ণের চেইন ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ৪ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নের মাকরান্দা গ্রামে। এমনকি বড় ভাইয়ের মিথ্যা মামলা ও অব্যাহত গালিগালাজ ও মারপিটে ছোট ভাইসহ তার পরিবার এখন দিনে বাড়িতে থাকলেও রাতে অন্যত্র পালিয়ে থাকছেন। স্ত্রী ও ছোট সন্তান নিয়ে এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন ছোট ভাই। এব্যাপারে তিনজনকে আসামী করে জেলা রাজশাহীর বিজ্ঞ আদালতে মামলা হয়েছে। পুলিশ একজনকে আটক করেছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজিমন মাকরান্দা গ্রামে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৃত আকবর আলীর দুই ছেলে এক মেয়ে। আকবর আলী বেঁচে থাকতে বড় ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ মিলন ও ছোট ছেলে সুজন আলীকে বিদেশে পাঠান। ছোট ছেলে সুজন আলী বিদেশে থেকে গেলেও বড় ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ মিলন চলে এসে খামারসহ অন্যান্য ব্যবসা করতে থাকেন। এতে ব্যাংকসহ অন্যান্য স্থানে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ঋণে পড়েন তিনি। সেই ঋণ পরিশোধে বাবার পৌনে ৪ বিঘা জমি ও মায়ের কিছু বিক্রি করতে হয়। এরপরও মা মেহেরুন নেসা বড়ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ মিলন ও তার বোনকে আরো জমি রেজিস্ট্রি করে দেন।
অপরদিকে ছোট ছেলে বিদেশ থেকে বাবা আকবর আলীর কাছে টাকা পাঠাতে থাকেন। ছোট ছেলে সুজন আলী বাড়ীতে ফিরে আসলে তার বাবা আকবর আলী বাড়ী ভিটাসহ এক একর ৯২ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। বাবা বেঁচে থাকতে এ নিয়ে কোন মামলা বা ঝামেলা হয়নি। ২০২২ সালে মাঝামাঝিতে আকবর আলী মারা যান। ২০২০ সালের দিকে জমি রেজিস্ট্রি হলেও ২০২৩ সালের প্রথম থেকে বড়ভাই, মা ও বোন ছোট ভাই সবুজ আলীকে জমি ফেরতের জন্য চাপসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ মামলা ও মারপিট অব্যাহত রাখে। স্থানীয়ভাবে বহুবার আপোষ মিমাংসা করলেও ইসতিয়াক আহমেদ মিলন ও তার মা বোন মেনে নেয় না।
এর জের ধরে গত ৪ জুন সন্ধ্যায় সবুজ আলীর স্ত্রী আফিয়া আকতার নিশিকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে বড় ভাই ইসতিয়াক আহমেদ মিলন তার স্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তরজেমা খাতুন শিল্পী ও নিশির শ্বাশুড়ি মেহেরুন নেছা হামলা চালিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়। পাশাপাশি তারা আহতের গলায় থাকা ১২ আনা ওজনের একটি সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়। তার চিৎকারে স্বামী সবুজ আলীসহ প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ব্যাপারে ৮জুন তিনজনকে আসামী করে জেলা রাজশাহীর বিজ্ঞ আদালতে মামলা হয়েছে। পুলিশ ইসতিয়াক আহমেদ মিলনকে আটক করেছে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষিকা তরজেনা খাতুন শিল্পী বলেন, ঘটনার সময়ে তিনি দ্বিতীয় তলার ঘরে মাগরিবের নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ শেষে শ্বাশুড়ির চিৎকারে নীচে এসে ঘটনা শুনেন। শ্বাশুড়ি এবং আমার জাইয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে সত্য। সোনার চেইন ছিনতাইয়ের ঘটনা মিথ্যা। এ ছাড়াও ঘটনার সময়ে আমার স্বামী ইসতিয়াক আহমেদ মিলন দুই কিলোমিটার দুরে দোগাছিতে ওষুধের দোকানে ছিলেন। পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিভাবে আমাদের জড়ানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপির সদস্য জয়নুল ইসলাম ও প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ আল হোসেন বলেন, মিলন ও সবুজ দুজনেই আমার ভাতিজা। সবুজকে তার বাবা বাড়ীসহ প্রায় ৬ বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়। অনেকবার এ নিয়ে আপোষ মীমাংসায় বসে সমাধা হয়নি। ওই জমির মধ্যে থেকে কিছু জমি সবুজ দিতে চাইলেও মিলন রাজি না হয়ে মামলা করায় এত কিছু হচ্ছে।