কাউন্সিলর হতে চান মাদক কারবারির ভাই রনি 

স্টাফ রিপোর্টার
এলাকায় মাদক ব্যবসার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ মেহেদী হাসান রনির হাতে। কোন মাদকের দাম কত হবে, সেটিও ঠিক করে দেন তিনি। কেউ তাঁর ঠিক করে দেওয়া দামের চেয়ে কমমূল্যে মাদক বিক্রি করলে তাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেন। শুধু মাদক নয়, জুয়ার বোর্ড চালানো, বাড়ি দখল, সরকারি জায়গা দখলসহ আরও অনেক অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এই মেহেদী হাসান রনি আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। শহরের ভেতর এই এলাকাটিতে মাদকের ছড়াছড়ি বহু আগে থেকেই। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এলাকার মাদক কারবারিতে নিয়েই ভোটের মাঠে নেমেছেন তিনি।

মেহেদী হাসান রনি এখন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে তিনি চাকরি করেন ‘জামায়াতের ব্যবসায়ীক গ্রুপ’ হিসেবে পরিচিত আমানা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘আমানা হোমস লিমিটেড’ এর একজন পরিচালক হিসেবে। আমানা হোমস রাজশাহীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শত শত বিঘা কৃষিজমিতে আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। মেহেদী হাসান রনির ক্ষমতার দাপটের সুবিধা নিতে প্রতিষ্ঠানটি তাকে পরিচালক বানিয়েছে।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, রনির বিরুদ্ধে এখন একটি মাদকের মামলা চলমান। এছাড়া নগরীর রাজপাড়া থানার ২০০৫ সালের একটি মামলায় রনি খালাস পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ আছে। এলাকার লোকজন জানান, রনি ওই সময় ছাত্রদল করতেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে ওই মামলাটি হয়েছিল। পরবর্তীতে রনি ছাত্রলীগ, স্বে”ছাসেবক লীগ হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হলফনামায় মাদকের যে মামলাটি চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ আছে সেটি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর দায়ের হয়েছিল নগরীর বোয়ালিয়া থানায়। সেদিন থার্টি ফার্স্ট নাইটে পিকনিকের নামে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে মাদক ও যৌনকর্মীসহ রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। রনির সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মোট সাতজন। এদের মধ্যে তিনজন যৌনকর্মী ছিলেন। তাদের কাছ থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

মাদকের মামলা শুধু রনির বিরুদ্ধেই আছে তা নয়। মাদক কারবারে জড়িত তার ভাই আজাদও। গত ৭ মে নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশের হাতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। পুলিশ তার কাছ থেকে ২০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। তিনি এখন কারাগারে। অভিযোগ রয়েছে, আজাদের কাছে হেরোইন ছিল আরও বেশি। আওয়ামী লীগ নেতা রনির চাপে পুলিশ মামলায় কম করে হেরোইন জব্দ দেখিয়েছে। রনির বাবার নাম মৃত আবুল হোসেন। এলাকায় তিনি ‘আবু গুন্ডা’ নামে পরিচিত।

রনির সহযোগী মোর্তজা কিছুদিন আগে মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন আরেক সহযোগী এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারী জিল্লুর সর্দারের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন রনি। তাঁর বিরুদ্ধে নিজের বাড়িতেই রমরমা জুয়ার আসর বসানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিহারী বাগান এলাকায় রনির পুরনো বাড়িতে জুয়ার আসর বসানো হতো প্রতিরাতে। রনির ভাই জনি নিজে থেকে এই জুয়ার আসর পরিচালনা করতেন। বছরখানেক আগে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহিউদ্দিন নিজে গিয়ে এই জুয়ার আসর বন্ধ করে আসেন।

মেহেদী হাসান রনি ও তার দুই ভাই এখন তিনটি মূল্যবান সরকারী জায়গা নিজেদের দখলে রেখেছেন। এক জায়গায় একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। অন্য দুই জায়গায় একতলা দুটি ছাত্রাবাস করা হয়েছে। এছাড়া মাদকসংক্রান্ত টাকা-পয়সার জের ধরে একাধিক ব্যক্তির বাড়ি দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে মেহেদী হাসান রনির বিরুদ্ধে।

নগরীর শেখেরচক মহল্লার এক বাসিন্দা বলেন, ‘মেহেদী হাসান রনি একজন মাদকের গডফাদার। এটা অনেক আগে থেকে। অন্তত ১৫ বছর আগে রনি মাদকের কারবারে জড়ায়। এখন নিজে প্রকাশ্যে না করলেও এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। ভারত থেকে মাদকদ্রব্য এনে সরবরাহ করায়। ক্ষমতার দাপটে সে বিহারী বাগানের মানিক ও শফিকের বাড়ি দখল করে রেখেছে। এই পরিবার এখন ভাড়া বাড়িতে থাকে অন্য এলাকায়।’

এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘রনির পুরো পরিবারটাই মাদকের সাথে জড়িত। রনির ভাই আজাদ কিছুদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছে মাদকসহ। কয়েকবছর আগে রনি ওই এলাকার বাবুর বাড়ি দখল করে নিয়েছে। এটাও মাদকসংক্রান্ত টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধের জের ধরে। বাবু এখন কেদুর মোড়ে ভাড়া থাকে। পাশের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জোসনা নামে আরেক নারীর বাড়িও রনি দখল করে রেখেছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রনি কারও বাড়ি দখল করেননি বলে দাবি করেন। তাঁর দাবি, মাদক ব্যবসার সঙ্গেও তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। বরং, এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কয়েকবছর আগে তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখন ভোট করছি তো, এসব অনেক মিথ্যা কথা ছড়ানো হবে। এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘আমি এমবিএ করা একটা ছেলে। আমানা হোমসের পরিচালকের মতো বড় পদে আছি। মাদক ব্যবসার কথা বললেই তো হলো না। আমার নামে একটাই মাদকের মামলা আছে। তাও আমি ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম না। থার্টি ফার্স্ট নাইটে এলাকার ছেলেরা একটু মজা করছিল। পুলিশ এসে তাদের ধরলে আমি ছাড়াতে গিয়েছিলাম। সেই মামলায় আমাকেও জড়িয়ে দেওয়া হয়।’ মাদকসহ তাঁর ভাই সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর পেছনে অন্য ঘটনা আছে। এটা সামনাসামনি বলব।’

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ | সময়: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine