সর্বশেষ সংবাদ :

গুটি-গোপাল-লক্ষণায় জমজমাট বানেশ্বর আমের হাট

স্টাফ রিপোর্টার

বৈরী আবহাওয়া ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এবার আমের ফলন কম। একারণে মৌসুমের প্রথমদিকে জমেনি রাজশাহীর বানেশ্বর আমের হাট। দেরিতে হলেও গত পাঁচ-সাত দিন যাবত জমেছে বানেশ্বর আমের হাট। তবে জমজমাট এ হাটেজুড়ে রয়েছে গুটি, গোপালভোগ ও লক্ষণার আধিক্য। শুক্রবার (৩ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীর বানেশ্বর আমের হাটে সরেজমিন ঘুরে আম চাষি, ক্রেতা, ফরিয়া ও আড়তদারদের সাথে কথা হয়।

 

আম চাষিরা বলছেন, গেলো বছরের চেয়ে এবার সব ধরনের আম মণ প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রথম থেকে এখন অব্দি বাজারে গুটি বা আঠি আমের প্রাধান্য রয়েছে। এছাড়াও লখনা, গোপালভোগ আমের আধিক্য দেখা গেছে বানেশ্বর হাটে। খিরসাপাত (হিমসাগর), রানি প”ছন্দ এবং ফজলি আম বাজারে দেখা মিললেও তা খুব কম। এবার এসব মিষ্টি জাতের আমের ফলন কম হওয়ায় তা গাছ থেকে আম ব্যবসায়ীরা পেড়ে সরাসরি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বানেশ্বর বাজারে এসব আমের দেখা মিলছে খুব কম।

 

চাষিরা বাজারে গোপাল, খিলসা ও রানি প”ছন্দ আম আনলেও তা মুহুর্তেই আড়তদার ও ফড়িয়ারা কিনে তা গুদামজাত করছেন বলে জানান আম চাষিরা।

আমের বাজার দর সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, বাজারে গুটি আম স্বাদ ও আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি ও বড় আকারের গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা মন। অপরদিকে, ছোট আকারের গুটিগুলো ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বেচা-কেনা হচ্ছে। বানেশ্বর বাজারে সবচেয়ে বেশি রয়েছে লখনা আম। আকার ভেদে এ আম বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ছোট আকারের সুমিষ্ট গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২০০০ এবং বড়গুলো বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৬০০ টাকায়। তবে গোপালভোগ আম শেষের পথে হওয়ায় এটি রাতারাতি ৩০০০ থেকে ৩৫০০ হাজার টাকায় পৌঁছাতে পারে বলেও জানান বানেশ্বরের চাষি ও আম ব্যবসায়ীরা।

এদিকে বাজারে উঠতে শুরু করা খিরসাপাত প্রথম থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে । ছোট আকারের খিরসাপাত ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হলেও বড় আকারের আমগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকায়। তবে মাঝারি আকারের রানি প”ছন্দ আম বানেশ্বর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। এছাড়া হাটে প্রতিমণ তোতাপুরি, আধাসুন্দরী, কাঁচামিঠা, রত্নাসহ আঁটি আমগুলো ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । ক্রেতাদের ভাষ্য, এবার সব আমের দামই বেশি।

বানেশ্বর আমের হাটের সংশ্লিষ্টরা জানায়, চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হওয়ায় প্রথমার্ধে জমেনি রাজশাহী জেলার এ প্রসিদ্ধ হাটটি। তবে গোপালভোগ, রানি প”ছন্দ ও খিরসাপাত (হিমসাগর), আম বাজারে আসার পর থেকে গত পাঁচ থেকে সাত দিন যাবত হাট হয়ে উঠেছে জমজমাট। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত সপ্তাহে হাটটি বানেশ্বর কলেজ মাঠে স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রচন্ড রোদ্রুউত্তাপ উপেক্ষা করে প্রায় আট থেকে দশ হাজার আম চাষি, ক্রেতা ও আড়তদারদের আনাগোনা প্রতিদিন।

অন্যদিকে, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা চাষিদের জন্য হাট সমিতির উদ্যোগে টাঙ্গানো হয়েছে প্যান্ডেল। ভ্যানে করে ক্যারেটভর্তি কাঁচাপাকা আম এনে চাষিরা জমায়েত করছেন এ হাটে। বানেশ্বর ডিগ্রি কলেজের মূল প্রবেশ দ্বার দিয়ে ঢুকছেন। আম বিক্রয় শেষে তা প্যাকিং করে কিংবা ক্যারেট ভর্তি আম নিয়ে যা”েছন কলেজ মাঠের পেছনের রাস্তা দিয়ে কুরিয়ার, ট্রাক কিংবা নিজ নিজ গন্তব্য স্থানে।

 

বানেশ্বর আমের হাটের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা সন্তষ্ট হলেও ঢলন প্রথা নিয়ে অসন্তুষ্ট আম চাষিরা। চাষিদের ভাষ্য, ঢলন প্রথায় ৪০ কেজিতে মণ হলেও ফড়িয়া বা আড়তিরা ৪৮ থেকে ৫২ কেজিতে ঢলন নিচ্ছেন। এতে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে বলে জানান তারা।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, এবার আমের উৎপাদন খুব কম। যার কারণে বানেশ্বর আমের হাট দেরিতে জমেছে। প্রথমদিকে অল্প সংখ্যক আম চাষি বানেশ্বরে তাদের মালামাল নিয়ে আসায় মাঠে বসার মতো পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে চাষিরা বানেশ্বর হাটমুখী হওয়ায় তা বানেশ্বর হাটে স্থানান্তরিত করা হয়।

হাট পরিচালনায় বেশকিছু দিক নির্দেশনা ও বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটিকে। তবে তারপরও আম চাষিদের অভিযোগ মিলছে ঢলন প্রথার মাধ্যমে চাষিদের কাছে বেশি আম নেওয়ার। এনিয়ে সতর্ক কথা বললেও আড়তিরা মানছে না বিধিনিষেধ। আবার ভুক্তভোগী চাষিরা সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগও করছে না। তাই আমরাও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এব্যাপারে বানেশ্বর হাট সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলামকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে ফোন করেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে মন্তব্য মেলেনি।

সানশাইন / শামি

 

 

 


প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২২ | সময়: ১০:৩৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine