শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে রাজশাহী সিটিতে : প্রধান নির্বাচন কমিশনার

শাহ্জাদা মিলন : 
আসন্ন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের নিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন মতবিনময় সভা করেছে। বুধবার রাজশাহীর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ এনডিসি মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় সকল মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিভিন্ন প্রার্থীরা তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন ও কি করণীয় সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে উত্তর জানতে চান।

 

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, গত এক বছরে এই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনও অবাধ সুষ্ঠু হবে। গাজীপুর সিটি নির্বাচন যা প্রমাণ করে। শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

 

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব সেটি পালন করতে। নির্বাচন কমিশনের সকল নির্দেশনা পালনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

 

বিশেষ অতিথি আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান বিপিএম পিপিএম (বার) বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর মাধ্যমে প্রত্যেক প্রতিনিধির কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফৌজদারি ঘটনা সংক্রান্ত যে কোনো ঘটনা ঘটলে এখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। সুস্থ সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা করা দরকার আমরা তাই করব। নির্বাচন উপলক্ষে কেউ কারো কাজে বাধা সৃষ্টি করবেন না সেজন্য সকলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

 

 

রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন বিপিএম পিপিএম বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। আপনারা এখানে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা সকলেই নিজেদের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন। আমরা যারা দায়িত্ব পালন করবো এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি আমাদের দায়িত্ব¡ শতভাগ পালন করা হবে।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান বলেন, আচরণবিধি নিয়ে বই দেয়া হয়েছে সকলকে। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন। এখন পর্যন্ত ৭৫০ টি সম্পন্ন করেছি। ৬৫০টি করেছি ইভিএমে। ইভিএম নিয়ে কেউ পক্ষপাতিত্বমূলক বিষয়ে বলেন নি। কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেননি। আমাদের স্বচ্ছতা ইচ্ছা দিয়ে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন করা হবে।

 

 

নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, রাজশাহীতে সবার আগে মেয়র প্রার্থীর ভোটের ফলাফল দেয়া হবে এরপর কাউন্সিলরদের এর ফলাফল দেওয়া হবে। কোন প্রকার অস্বচ্ছতা পাবেন না।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে আপনার লোকেরা ওয়াচম্যান হিসেবে থাকবে, মাসলম্যান হিসেবে নয়। বক্তব্যকালে তিনি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নির্বাচনের সময় আচরণবিধি নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দেন।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ জায়গা থেকে নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচনের কাজ করে। যতগুলো নির্বাচনে কাজ করেছি পুলিশ কিংবা জেলা প্রশাসন কোনো প্রার্থীর পক্ষেই পক্ষপাতিত্ব করেননি।

 

তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের উদ্দেশ্য বলেন, যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে যাচ্ছেন তারা পরম সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের স্বাক্ষর দিবেন। আচরণবিধি প্রশ্নে আমরা কঠোর থাকব বলে তিনি জানান। কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার প্রার্থীতা বাতিল হবে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতিনিধি নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, সবাই আশা প্রকাশ করছেন তিনি জিতবেন তবে সত্যটা হলো প্রত্যেক জায়গা থেকে একজন করে জিতবেন। যদি আমাদের আচরণের সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে পারি তবে সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে নিয়ে এমন আলোচনার দরকার হবে না পরবর্তীতে। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নির্বাচনের দিন অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ভোটাররা ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যাবে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ভোট দিতে আসা লাইনে বিশৃঙ্খলা, লাইন থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা সেটি খেয়াল রাখতে বলেন। যদি কোন প্রার্থী পেশিশক্তি ও অর্থ শক্তি ব্যাবহার করেন তা যদি প্রমাণিত হয় তবে সেটি আমরা ব্যবস্থা নিব বলে জানান। তিনি আরো বলেন, ভোট শুরু থেকে ফলাফল পর্যন্ত সজাগ থাকতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সকলকে।

 

ইভিএম বিষয়ে তিনি বলেন, এটি খুব সহজ মেশিন। গাজীপুরে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানে বেশিরভাগ গার্মেন্টসকর্মী। তারা ভোট দিয়ে আসার পর সকলকে জানান এভাবে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা ভালো। নির্বাচনের দিন সিসিটিভির মাধ্যমে আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করবো যদি কোনো অনিয়ম হয় সেই ভোট কেন্দ্র বন্ধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেন।

 

সভাপতির বক্তব্যে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফারুল্লাহ এনডিসি বলেন, আর মাত্র ১৪ দিন বাকি আছে রাসিক নির্বাচন হতে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। রাজশাহী নিয়ে আমরা গর্ব করি। এখানকার জনগণ আপনাদের কাংখিত সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখাবে। যারা নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না তিনি তাদেরকে সতর্ক করেন ।এছাড়া ২১শে জুন যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটি অবাধ সুষ্ঠু হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভায় প্রিন্ট ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩ | সময়: ১০:২৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর