নাগাল পাচ্ছে না পুলিশ : বিএনপিতে কলঙ্ক লাগিয়ে লাপাত্তা চাঁদ

স্টাফ রিপোর্টার, চারঘাট/ বাঘা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির পর থেকে লাপাত্তা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। তাকে এখন নিজ দলেই ‘বিএনপি কলঙ্ক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় থাকা চাঁদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থির পর পুলিশ তাকে গ্রেফতারে হন্যে হয়ে খুজছে। তবে কোন নাগাল পাচ্ছে না।
এদিকে চাঁদের বিতর্কিত বক্তব্যে চরম বিব্রত এখন খোদ বিএনপির কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতারা। ফলে দলীয় ভাবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখেও পড়তে পারেন আলোচিত বিএনপি নেতা চাঁদ। বিএনপির একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা যায়, গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসুচী পালনের সময় সভাপতির বক্তেব্য জেলা বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে বলে উদ্ধত্যপুর্ন বক্তব্য দেন। এরপর চাঁেদর সেই বেফাস বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সারাদেশে ফুসে উঠে আওয়ামীলীগসহ সহযোগী সংগঠনর নেতাকর্মী-সমর্থরা। বিক্ষোভ, শ্লোগানে চাঁদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবির পাশাপাশি তাকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
ইতিমধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া, মোহনপুর, কাশিয়াঙ্গা ও নাটোর সদর থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন অপরাধে একের পর এক মামলা হয়। ওই সব মামলায় চাঁদকে গ্রেফতারে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। তবে আত্মগোপনে থাকায় তার সন্ধান পাচ্ছে না পুলিশ। চাঁদের বাড়ীসহ সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করেও তার লাগাল পাচ্ছে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।
এদিকে চাঁদের বেফাস বক্তব্যে ইতিমধ্যে দু:খ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও রাজশাহী সদরের সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু।
চারঘাট মডেল থানার ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, ঘটনার পর থেকে তাকে গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন ইউনিটে কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেফতারে সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের নামে কদিন পরপরই পদযাত্রা, বিক্ষোভ ও জনসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল বিএনপি। সরকারও অনেকটা ছাড় দিচ্ছিল। কিন্তু রাজশাহীর নেতা চাঁদের বেফাঁস মন্তব্য ও হুমকিতে চরম বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। তাদের ফ্রন্টলাইনের আন্দোলন যেন এক ঝলকেই চলে গেছে ব্যাকফুটে। এক চাঁদের কলঙ্কেই অমাবস্যার আঁধারে ডুবেতে বসেছে বিএনপি।
বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত দলের কোনো শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে গুঞ্জন চলছে সরকারপ্রধানকে হুমকি দিয়ে পুরো দলকে গর্তে ফেলেছেন চাঁদ। দেশজুড়ে দলকে পর্যুদস্ত করা বিএনপির বিতর্কিত নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। কারণ বিএনপি নেতার এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের পর কেবল রাজশাহীতেই নয়, পুরো দেশেই বিএনপিকে কঠোরভাবে রাজপথে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহোযোগী সংগঠন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার রাজশাহীসহ গোটা দেশে সেই কর্মসূচির ‘ট্রায়াল ভার্সন’ পর্যবেক্ষণ করেছেন সবাই। রাজশাহীতে কর্মসূচি পালনের জন্য মাঠেই নামতে পারেনি বিএনপি। আর দেশের বেশকিছু স্থানে কর্মসূচি পালন হয়েছে পাল্টাপাল্টি। এর প্রধান ইস্যুই ছিল রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও খোদ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও মনে করেন সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি নেতা চাঁদের এমন বক্তব্য দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হয়নি। কারণ তাদের আন্দোলন কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে নয়। আর এবারই প্রথম নয়, এর আগেও আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে বক্তব্য দিয়েছেন। ওই ঘটনায় কিছুদিন আগেই জামিনে কারামুক্ত হন বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ।
তাই একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিএনপিও বিব্রত। এবার তিনি দলীয় পদ হারাতে পারেন বলে গুঞ্জন চলছে। সেই খবর এরই মধ্যে ডালপালা মেলেছে রাজশাহীতে। যদিও প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিয়েই লাপাত্তা হয়েছেন চাঁদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে কবরস্থানে পাঠানোর হুমকি দাতা রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের উত্থান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়েই। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়ন থেকে উঠে আসা এ আবু সাইদ চাঁদের অপকর্মের নানা কাহিনী এখনও রয়েছে মানুষের মুখে মুখে। নব্বইয়ের দশকে নিজ এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছিলেন এ আবু সাঈদ চাঁদ।
জানা গেছে, রাজশাহীতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের জোরালো আপত্তির পরও ২০১৯ সালের ৫ জুলাই বিতর্কিত নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি করে দেয় দলীয় হাইকমান্ড। আর জেলার কমিটি ঘোষণার পর থেকেই তা বাতিলের দাবি জানান তৃণমূল নেতাকর্মীরা। শুরুতে নানা কর্মসূচিও পালন করেন। কিন্তু ওই আহ্বায়ক কমিটি বাতিল হয়নি; চার বছরে হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। হালে নতুন উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর তাই ওই পক্ষ আবারও ভেতরে ভেতরে জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি তুলেছেন।


প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ