বাঘার মাদক সম্রাট আফাজ এবার ময়মনসিহ ডি.বি পুলিশের হাতে আটক !

স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : রাজশাহীর বাঘা সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা। বহুকাল থেকে এ অঞ্চলে চলে আসছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। অনেকেই বাঘাকে মাদকের রাজধানী বলে অখ্যায়িত করে থাকেন। এখানে ১০-১২ টি গ্রাম মিলে প্রায় তিন শতাধিক মাদক চোরাকারবারী রয়েছে। তবে থানায় তালিকা রয়েছে দুই শতাধিক ব্যাক্তির নামে। এদের একজন, মাদক সম্রাট আফাজ আলী । তার নামে রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। তিনি বিপুল পরিমান মাদক(হেরোইন)সহ বুধবার রাতে ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। এ সময় তার সাথে ছিলো পাশ্ববর্তী লালপুর উপজেলার অপর এক মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন ।

স্থানীয় লোকজন জানান, এ অঞ্চলে যারা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত তাদের মধ্যে একেক জনকে-একেক নামে ডাকা হয়। এর মধ্যে একজন পিতাকে ডাকা হচ্ছে গাঁজার ডিলার এবং ছেলেকে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা সম্রাট। এই দু’জনের নামে থানায় রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। এর মধ্যে পিতা রবি ভান্ডরি এখন কারাগারে অপর দিকে ছেলে রাব্বি হাসান রয়েছে আত্নগোপনে। এ সীমান্তে প্রতিনিয়ত দেখা যাই, দামি মোটারসাইকেল ও প্রাইভেট কার-সহ বহরিগত যুবকদের আনাগোনা । এরা সুবিধামত সময়ে এসে মাদক সেবন করে এবং নিয়ে যায়।

বাঘা সীমান্ত এলাকার লোকজন জানান, বর্তমানে নদীতে পানি বাড়ায় রাজশাহীর বাঘা সীমান্তে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাচালান বানিজ্য। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে প্রতিদিন অনায়াসে চলে আসছে মরণ নেশা হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল, ইয়াবা, হিরোইন ও গাঁজা সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। যা পারা-পারের জন্য রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চোরাচালান সিন্ডিকেট। এ উপজেলার সীমান্ত এলাকা আলাইপুর ও মীরগঞ্জ-এ দু’টি বিজিবি ক্যাম্প থাকলেও তাদের ভুমিকা রহস্য জনক। এরা প্রতিমাসে দু’চারটা মাদকের চালান আটক দেখালেও আসামী গ্রেফতারে বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে । সম্প্রতি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিং-এ বিজিবির এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, লোকবল কম থাকায় তারা চাইলেও আসামী আটক করতে অনেক সময় ব্যর্থ হন। এ দিক থেকে থানা পুলিশ প্রতিমাসে যে পরিমান মামলা রেকড-সহ আসামী আটক করছেন তার মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগই মাদক।

বাঘা থানা পুলিশের একটি মুখপত্র জানান, বাঘা সীমান্ত এলাকা। এ অঞ্চলে মাদকের ব্যাপক প্রবনতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এটি নিয়ন্ত্রনের জন্য। তাঁর ভাষ্য মতে, মাদক সহ যাদের আটক করে জেল-হাজতে পাঠানো হয় ,তারা অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে ফের নতুন করে মাদক ব্যবসায় সক্রিয় হয়। তবে এ বিষয়ে বাঘা সীমান্তে অবস্থিত দু’টি বর্ডার গার্ড(বি.জি.বি) ক্যাম্পের সদস্যরা সক্রীয় হলে এর প্রবনতা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাঘার সুধী জনরা জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগার উপর দিয়ে উপজেলার বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই চোরাই পণ্য আসছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। বিশেষ করে মীরগঞ্জ, আলাইপুর, হরিরামপুর, কলিগ্রাম ও কিশোরপুর ঘাট এখন চোরাচালানীদের জন্য অনেকটা অভয়ারণ্য। এ সমস্ত ঘাট দিয়ে ভারতীয় নানা প্রকার যন্ত্রাংশ সহ মরণ নেশা হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল,ইয়াবা,গাঁজা ও হোরোইন অনায়াসে পাচার হয়ে আসছে দেশের অভ্যান্তরে। আর এ গুলোর সবই নিয়ন্ত্রন করছেন একটি চোরাচালান সিন্ডিকেট।

এদের একজন আফাজ আলী (৫০)। তিনি বিপুল পরিমান মাদক (হেরোইন)সহ বুধবার রাতে ময়মনসিংহ গোয়েন্দা(ডি.বি) পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। এ সময় পুলিশ তার সহযোগী পাশ্ববর্তী লালপুর উপজেলার অপর এক মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন(৪৭)কেও আটক করেন। এই দু’জনের নামে ময়মনসিংহ ভালুকা মডেল থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে আফাজ আলীর নামে বাঘা-সহ বিভিন্ন থানায় রয়েছে ১০ টি মাদক মামলা।

এর আগে সম্প্রতি রাজশাহী ডিবি পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে বাঘার কিশোরপুর এলাকার একটি আম বাগান থেকে একজন ভারতীয় মাদক ব্যসায়ী-সহ স্থানীয় অপর এক মাদক ব্যবসায়ীকে ৭ শ বোতল ফেন্সিডিল সহ আটক করে। এদিকে নাম প্রকাশ না করার সর্তে বাঘা সীমান্ত এলাকার একজন স্কুল শিক্ষক জানান, এ উপজেলায় যারা মাদক কারবারের সাথে সম্পৃক্ত তাদের মধ্যে- নান্টু, মনির, হাফিজুর, রানা ,আলী হোসেন, শামিম, শাহিন, রুবেল মোল্লা, সোহেল মোল্লা ,ইদ্রিশ মোল্লা, ভোলা, চপল, শফিকুল, জার্জিস ও শহিদুল সকলের কাছে পরিচিত।

বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খাইরুল ইসলাম জানান, বাঘা সীমান্ত এলাকা। এ অঞ্চলে মাদকের প্রবনতা অনেক বেশি। এখানে যারা মাদক ব্যবসা করে তারা প্রতিনিয়ত কৌশল পরিবর্তন করে ব্যবসা পরিচালনা করে। অমারা চাইলেও সব সময় তাদের আটক করতে পারিনা। তারপরেও প্রতিমাসে থানায় যে পরিমান মামলা হয়, তার তিন ভাগের দুই ভাগই মাদক। আমরা এটি সম্পুর্ণ নির্মুল করতে না পারলেও পূর্বের চেয়ে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।


প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৩ | সময়: ৫:২১ অপরাহ্ণ | সানশাইন