উন্নয়নে বদলে গেছে বাগমারা

আলমগীর হোসেন, বাগমারা: বর্তমান সরকারের সময়ে যোগাযোগ খাতে যে বিপ্লব ঘটেছে তা চোখে পড়ার মতো। উপজেলা সদরের সাথে সেতু বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে প্রতিটি ইউনিয়নের। সেইসাথে ইউনিয়ন পরিষদের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তাঘাট।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নাজুক। পিছিয়ে পড়েছিল বাগমারা। ছিল অবহেলিত এক পশ্চাদমুখ জনপদ। যোগাযোগ ব্যবস্থায় পিছিয়ে থাকা বাগমারা এখন অনেক অগ্রসর।
শহরের সাথে তুলনা করে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রাস্ত-ঘাট। সেই সাথে পুরাতন কিছু রাস্তা সংস্কার, নতুন করে রাস্তা পাকাকরণ, ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণ হওয়ার ফলে উন্মোচিত হয়েছে সহজ যোগাযোগের দ্বার। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে মানুষের জীবন যাত্রার মানও বেড়েছে। নেই আগের মতো জন দুর্ভোগ।
এ সময়ে উপজেলার প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে আরো রাস্তা। বর্তমান সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধিনে মোট ৪২৭ মিটার দৈর্ঘ্য নতুন ৮টি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরের তত্ত্বাবধানে আরো ৭টি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। দামনাশ-ফতেপুর ভায়া সোনাডাঙ্গা সড়কে, পাহাড়পুর-হুলিখালী রাস্তায়, রায়নগর-শুটকিগাছা, তালতলি-যাত্রাগাছি সড়কে, মন্দিয়াল-বান্দাইখাড়া সড়কে, পীরগঞ্জ-বীরকয়া ফকিন্নী নদীর উপর, ভবানীগঞ্জ-বান্দাইখাড়া সড়কে ও গোড়সার-জোলাপাড়া সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন সাতটি ব্রীজ।
পাশাপাশি ভবানীগঞ্জে ফকিন্নী নদীর উপরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময়ে আরো ২২ মিটার দৈর্ঘ আরো পাঁচটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়পুর থেকে হুলীখালি, দামনাশহাট-ফতেপুর, মচমইল-খালগ্রাম, মচমইল মোহনগঞ্জ, তাহেরপু-শ্রীপুর সড়কটি পাকাকরণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এগুলো সাংসদের নির্বাচনী অঙ্গীকারও ছিল। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এসব সড়কের কাজ করেছেন।
এছাড়াও তিনি, মচমইল থেকে হাট গাঙ্গোপাড়া, সাঁকোয়া থেকে মধ্যঝিনা, তালতলী থেকে মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ, যাত্রাগাছি থেকে বড়বিহানালী ইউনিয়ন পরিষদ, শ্রীপুর থেকে মোহনগঞ্জ, তাহেরপুর থেকে শ্রীপুর, গোবিন্দপাড়া থেকে হুলিখালী, খদ্দোকৌড় থেকে শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ, মাড়িয়া থেকে বানইল, নারায়নপুর থেকে বটতলীহাট, বাইগাছা থেকে নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা, মাড়িয়া থেকে হাতরুম, মাথা ভাঙ্গা থেকে দয়েরঘাট, গোপালপুর থেকে আচিনঘাট, বাড়ীগ্রাম থেকে কাইনস্বর, নামাজগ্রাম থেকে মুগাইপাড়া পর্যন্ত পাকাকরণ হয়েছে। এছাড়াও সোনাডাঙ্গা থেকে শিমলা ভায়া ভরট্ট, খর্দ্দকৌর থেকে শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ, সাইপাড়া থেকে হাটমাধনগর।
এ সময়ে কাচারীকোয়ালপিাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পীরগঞ্জ বাজার, বড়বিহানালী হতে হরিণমারা, বাঁধেরহাট থেকে ফতেপুর, শেরকোল থেকে শিমলা পাকাকরণ করা হয়েছে।
এরই মধ্যে যে সকল রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে ভবানীগঞ্জ থেকে পুঁঠিয়া, ভবানীগঞ্জ থেকে বীরকুৎসা, মচমইল থেকে হাট-গাঙ্গোপাড়া, হাট-গাঙ্গোপাড়া থেকে গোবিন্দপাড়া, ভটখালী থেকে ঝিকরা, ভবানীগঞ্জ থেকে বান্দাইখাড়া। অপরদিকে ভাগনদী থেকে আহসানগঞ্জ, মচমইল থেকে মোহনগঞ্জ এবং ভবানীগঞ্জ থেকে ঝিকরা রাস্তা পাকাকরন করা হয়েছে।
এছাড়াও উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যেমে উপজেলার ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবন সমূহ চাঁনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাঁকোয়া, দেওপাড়া বিলমাললী, বীরকয়া ত্রিমোহনী, রুহিয়া মাহমুদপুর, সমষপুর এবং চাইসারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিণমারা, মহব্বতপুর এবং বারুইপাড়া, বাজোকোলা, রনশীবাড়ী, ঝিকরা, সাঁকোয়া শিকদারী, মাধাইমুড়ি, হায়াতপুর, ধামিনকৌড়, দক্ষিণ জামালপুর, গঙ্গানারায়নপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়াও চলমান রয়েছে ভবানীগঞ্জ মডেল, মচমইল, বুজরুক কোলা, বাগমারা সহ বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্মাণ ও সংস্কার করেছে ২০ কিলোমিটার রাস্তা। উপজেলার অবহেলিত কাচারীকোয়ালীপাড়া ইউনিয়নে কোন পাকা রাস্তা না থাকলে এ সরকারের আমলে সেখানে রাস্তা করা সম্ভব হয়েছে।
ভবানীগঞ্জ-মোহনপুর সড়কের পাকাকরণের কাজ শেষ হয়েছে এ সরকারের সময়ে। সড়কটি ছিল এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। ফলে ইউনিয়নবাসীর উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের পথ সহজ হয়েছে।
সাংসদ এনামুল হকের প্রচেষ্টায় পাকাকরণ করা হয়েছে বাগমারার প্রায় সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা। বর্তমানে সংস্কার প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা। হেরিং বন্ড রাস্তা করা হয়েছে ২৫ কিলোমিটার।
অন্যদিকে হয়েছে আরডিআরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার, বৃহত্তর রাজশাহী প্রকল্পে ৩ কিলোমিটার এবং আইআরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় ১৪ কিলোমিটার। এটি ব্যয় হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। ফ্লাড আমফান প্রকল্পে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার, ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে ২৬ কিলোমিটার এবং গত বছর ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়েছে ৭০ কিলোমিটার। ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫ টির প্রাচীণ নির্মাণ ও একটি স্টাফ রুম নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আরো রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তালঘাট ব্রীজ, মাধনগর ব্রীজ, উত্তর একডালা ব্রীজ, জোলাপাড়া ব্রীজ, রায়নগর ব্রীজ, চাইসাড়া ব্রীজ, খালগ্রাম ব্রিজ, নিচু কাতিলা ব্রীজ, ঝিকরা-কয়ড়া বাড়ি ব্রীজ পাহাড়পুরে ব্রীজ নির্মাণের যে দাবি ছিল তা পূরণ করেছেন সাংসদ। ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে অত্যাধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও ২টি ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাগমারায় নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক খাদ্যগুদাম, সার্ভার স্টেশন, ঝিকড়ায় ঠাকুরঝিতে আবাসন প্রকল্প, ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সাথে ৭টি কলেজ, ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৬টি মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার ও ডাকবাংলো নির্মাণ সহ সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অসংখ্য মসজিদ ও মন্দিরের কাজ করা হয়েছে এ সময়ে।
সেই সাথে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। প্রতিবছর এডিবির অর্থায়নে হয় এক কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক কাজ।
এ সময়ে খাদ্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৮৪ টাকা ব্যয়ে ২১৮ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও টিআর প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ১০৯ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এজন্য মোট ৪ হাজার ৯৭০ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার বাজার মূল্য ৩৬ কোটি ৯৫ লাখ ৭২ হাজার ৯৯৮ টাকা।
একই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অতি দরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় করা হয়েছে ১৬ কোটি ১০ লাখ ৫১ হাজার ৬৭১ টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস হতে নির্মাণ করা হয়েছে ৪১ মিনি ব্রীজ, ৮ কিলোমিটার হেরিং বন্ড রাস্তা। এছাড়াও ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার, ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১০০ বান্ডিল।
তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওয়ায় উপজেলায় ৪৮৭ জন গৃহহীন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে অসচ্ছ্বল মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে বীর নিবাস নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। বলা চলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূখী কর্মকান্ড আর বাগমারা আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই বাগমারার সব খানে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে।


প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৩ | সময়: ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ