পুরনো দল নয়, ইসির ভাবনায় নতুন নিবন্ধন প্রত্যাশীরা

সানশাইন ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত ৪০ দল নির্ধারিত শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা তা যাচাইয়ের কথা ভাবছে না নির্বাচন কমিশন। ফলে ভোটের আগে এসব দলকে নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার পরীক্ষায় ‘পড়তে হচ্ছে না’। কেন্দ্রীয় অফিস এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটি নিয়েও অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে দলগুলো।
তবে নিবন্ধনে আগ্রহী নতুন দলগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে টিকে থাকা ১২টি দলের মাঠ পর্যায়ের তথ্য তদন্তের কাজ শুরু করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালনসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে এ বছরের মে মাসের মধ্যে পর্যালোচনা শেষ করার কথা রয়েছে। মে মাসে দলের নিবন্ধন বহাল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ারও কথা।
একই সঙ্গে গত বছরের অগাস্টে নিবন্ধন আগ্রহী দলগুলোর আবেদন নেওয়া শুরু করে মে মাসে তা যাচাই বাছাই সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। সে হিসেবে আগামী জুনে নতুন নিবন্ধিত দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান দলগুলো শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা, তা যাচাইয়ের কাজ থেকে সরে এসে শুধু নতুন দলগুলোর তদন্ত নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “আমরা আর পুরনো দলগুলোর বিষয়ে কোনো খোঁজ খবরে যাচ্ছি না। নিবন্ধিত দলগুলোর শর্তাদি প্রতিপালন করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে কমিশনের কোনো নির্দেশনা এখনও আমাদের দেওয়া হয় নি। তবে নিবন্ধন প্রত্যাশী ১২টি দলের তথ্য যথাযথ রয়েছে কিনা তা মাঠ পর্যায়ে তদন্তে পাঠানো হচ্ছে।”
গেল অক্টোবরে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালনের তথ্য চেয়েছিল ইসি। এক মাসের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইসির চিঠির জবাব দেয় ২১টি রাজনৈতিক দল, সময় চেয়ে আবেদন করে চারটি ও ১৪টা দল সময়মত জবাব দেয়নি। অবশ্য ডিসেম্বরের মধ্যে সব দল তথ্য দেয়। কিন্তু এরপর আর এগোয়নি কমিশন। কী কারণে নিবন্ধিত দলগুলোর হালনাগাদ তথ্য নেওয়ার পরও মাঠ পর্যায়ে যাচাই করা হচ্ছে না, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার।
তিনি বলছেন, নতুন দলগুলো নিয়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যোগ্য বিবেচিত হলে নিবন্ধন দেওয়া সম্ভব হবে। আর তদন্ত প্রতিবেদনে সঠিকতা না পেলে অযোগ্য বিবেচিত হবে। ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, ইসির নির্দেশনা পাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ১২টি দলের কেন্দ্রীয় অফিস, জেলা ও উপজেলা কমিটির তথ্য, সমর্থনসূচক তালিকার সঠিকতা যাচাই ও অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে ইসির আইন সংস্কার প্রস্তাবও ঝুলে আছে দীর্ঘদিন। এর মধ্যে ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সময়সীমা পার হলেও নতুন করে আইন সংস্কারের কাজ শেষ করতে পারেনি কমিশন। নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন না করলে নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ‘বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে’ বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বে রাখার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু নিবন্ধিত কোনো দলের তা নেই, পূরণ করতে পারেনি (২০২০ সালের মধ্যে), এটা বাস্তবতা। তাহলে তো সব দলের নিবন্ধন যাবে। এ বিষয়টা যারা আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, তারা বাস্তবতা বিবেচনা করেননি।
রোডম্যাপ-রাজনৈতিক দলগুলো বিধি-বিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করে দেখার আইনানুগ দায়িত্ব ইসির। নিবন্ধিত দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত যথাযথ প্রতিপালন করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে সব দল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। নতুন দলগুলোর নিবন্ধন প্রদান ও নিবন্ধিত দলগুলোর হালনাগাদ অবস্থা পরীক্ষা করা হবে।
তথ্য সংগ্রহের সময় শুরু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর। পর্যালোচনা করে নিবন্ধন বহালের সিদ্ধান্ত ২০২৩ সালের মে। নতুনদের আবেদন শুরু ২০২২ সালেল অগাস্টে, নিবন্ধন প্রদান ২০২৩ সালের মে এবং চূড়ান্ত প্রকাশ জুনে। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল ৪০। নতুন আবেদন করেছে ৯৩ দল; বাছাইয়ে টিকে আছে ১২ দল যাদের তদন্ত চলমান।
সবশেষ নিবন্ধন তথ্য যাচাই-বছাইয়ে সঠিকতা না পেয়ে একাদশ সংসদ ভোটের আগেও নিবন্ধন বাতিলের ঘটনা রয়েছে। নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন না করায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন এবং ভোটের পরে ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি, ২০২১ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।
মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে ফেরদৌস কোরেশীর দল পিডিপির কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং জেলা ও উপজেলা দপ্তরের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা পায়নি ইসি। শফিউল আলম প্রধানের জাগপার পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়, এক তৃতীয়াংশ জেলা, ১০০ উপজেলা/থানায় তাদের কোনো দলীয় কার্যালয় নেই। ১০০টি উপজেলায় ২০০ জন ভোটার সদস্যও তাদের নেই। আর কাজী ফারুকের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের কাছে কমিশন যেসব তথ্য চেয়েছিল, তা দিতে ব্যর্থ হয় দলটি।


প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৩ | সময়: ৫:২২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ