সর্বশেষ সংবাদ :

অগভীর নলকূপে তীব্র পানি সঙ্কট, খরায় পুড়ছে ফসল

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের বড়াইগ্রামে পানির স্তর অস্বাভাবিক ভাবে নীচে নেমে যাওয়ায় কমপক্ষে ৯০ শতাংশ হস্তচালিত টিউবওয়েল ও ৮০ শতাংশ স্যালোচালিত সেচ পাম্প অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে উপজেলার সর্বত্র সুপেয় ও সেচের পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। স্যালো মেশিনগুলো ভূ-উপরিভাগ থেকে ৭-৮ ফুট নীচে গর্তে নামিয়েও পানি উঠছে না। এতে জমিতে সেচ দিতে না পেরে চরম বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকেরা।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর চলমান খরতাপের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৪০ ফুটের বেশি নিচে নেমে গেছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে উপজেলায় মোট চার হাজার ২২৪টি সরকারি টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে দুই হাজার ৪১১টি টিবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে ব্যক্তিগত ভাবে বসানো ৮৫ হাজার ১০৪ টি টিউবওয়েল রয়েছে। পানির স্তর অস্বাভাবিক নীচে নেমে যাওয়ায় এসব টিউবওয়েলের মধ্যে ৭৬ হাজার ৫৯৪ টি টিউবওয়েলে কোন পানি উঠছে না।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ছয় হাজার ১৪ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। উপজেলায় মোট ৫ হাজার স্যালোমেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮০০ টি ডিজেল চালিত। এসব স্যালোমেশিনের মধ্যে কমপক্ষে ৪ হাজার স্যালোমেশিনে বর্তমানে পানি উঠছে না। এমনকি অনেক এলাকায় গর্ত করে পাম্প নীচে নামিয়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন চাষীরা।
একই ভাবে উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বড়ালসহ অন্যান্য নদীও শুকিয়ে গেছে। পানি নেই খাল-বিলেও। শুধু কিছু গভীর নলকুপ ও সাব মার্সিবল পাম্পে যে পানি পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে পান ও সেচের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। রোজার মধ্যে পানির হাহাকার উঠেছে উপজেলা জুড়ে।
সরেজমিনে রয়না, মানিকপুর, রামাগাড়ি, ধানাইদহ ও আহম্মেদপুর এলাকা ঘুরে পানির তীব্র হাহাকার দেখা গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, চলতি বছর পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। উপজেলার কমপক্ষে ৯০-৯২ ভাগ টিউবওয়েলেই বর্তমানে পানি উঠছে না। কোথাও কোথাও পুরো গ্রাম জুড়ে কোন টিউবওয়েলেই পানি উঠছে না। যেসব বাড়িতে সাবমার্সিবল পাম্প আছে তারাই ঠিকমত পানি পাচ্ছেন। এ কারণে সময় সাপেক্ষ ও কষ্টদায়ক হলেও দুর-দুরান্ত থেকে লোকজন সেসব জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ভ্যানে করে পাত্র ভরে পানি নিতেও দেখা যাচ্ছে।
টিউবওয়েলগুলোর মতো মাঠের যন্ত্রচালিত অগভীর নলকূপগুলোও অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে মাঠের ফসল পুড়ছে রোদ-খরায়। শুষ্ক আবহাওয়ায় ঝরে পড়ছে আম-লিচুর গুটি।
মামুদপুর গ্রামের চাষী আবু রায়হান বলেন, এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে ধানচাষ করছেন। নিজের অগভীর নলকূপ দিয়ে এসব জমিতে সেচ দিতেন। কিন্তু ৮-১০ দিন ধরে সেচ পাম্পে কোন পানি উঠছে না। বাধ্য হয়ে প্রায় ৮ ফুট গর্ত করে সেখানে পাম্প বসিয়েছেন, তারপরও পানির দেখা মিলছে না।
ধানে থোড় চলে এসেছে। এখন পানি দিতে না পারলে সব ধান চিটা হয়ে যাবে। তার মত অন্যান্য সেচ পাম্প মালিকরাও একই কথা বলছেন। মানিকপুর গ্রামের গৃহবধু রোখসানা পারভীন বলেন, আমাদের গ্রামের কোন বাড়িতেই টিউবওয়েলেই পানি উঠছে না। বাধ্য হয়ে আমরা ভ্যানে করে দেড় কিলোমিটার দুরে রয়না গ্রাম থেকে পানি এনে দৈনন্দিন কাজ করছি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সৈকত আহমেদ যুগান্তর’কে বলেন, দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরার কারণে পানির স্তর ৪০ ফুট নীচে নেমে গেছে। এতে উপজেলার সব এলাকাতেই পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার বেশি সংকটপূর্ণ স্থানগুলোতে শতাধিক সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, তীব্র তাপদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে সেচ পাম্পগুলোতে পানি উঠছে না। এতে বোরো চাষীরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। জমিতে পানি না থাকার পাশাপাশি ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা থাকায় ধানের চিটার পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাপদাহের কারণে এছাড়া বৃষ্টি না হলে পাট চাষ ব্যাহত হবে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৩ | সময়: ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ